সর্বশেষ
[glt-translator]
Home » শিক্ষা » বিশ্ববিদ্যালয় » ইবিতে র‌্যাগিংকাণ্ডে দুই তদন্ত কমিটি, ধামাচাপা দিতে তৎপর ছাত্রলীগ

ইবিতে র‌্যাগিংকাণ্ডে দুই তদন্ত কমিটি, ধামাচাপা দিতে তৎপর ছাত্রলীগ

সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলে এক নবীন ছাত্রকে র‌্যাগিং ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গতকাল পৃথক দুই তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও লালন শাহ হল কর্তৃপক্ষ। রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে, ভিসি’র নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটিতে শেখ রাসেল হল প্রভোস্ট ড. দেবাশীষ শর্মাকে আহ্বায়ক, আইন প্রশাসক ড. আনিচুর রহমানকে সদস্য এবং সহকারী প্রক্টর মিঠুন বৈরাগীকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিকে ঘটনাটি যাচাই-বাছাই করে দ্রুতসম্ভব রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে। এদিকে হল কর্তৃপক্ষ থেকে গঠিত কমিটিতে হলের আবাসিক শিক্ষক ড. আলতাফ হোসেনকে আহ্বায়ক ও হলের সহকারী রেজিস্ট্রার জিল্লুর রহমানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- হলের আবাসিক শিক্ষক মো. আব্দুল হালিম ও ড. মো. হেলাল উদ্দিন। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান বলেন, চিঠি পাওয়ার পর পরই আমরা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপর ছাত্রলীগ: এদিকে ঘটনার পর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তৎপর রয়েছেন বলে জানিয়েছে সূত্র। শাখা ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী জানান, ঘটনার পরদিন দুপুরে ফুটবল মাঠে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কাছে অভিযুক্তদের নিয়ে আসেন শাখা ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান হাফিজ ও নাসিম আহমেদ মাসুম। এ সময় অভিযুক্তদের চড়-থাপ্পড় মারেন হাফিজ।
এ ছাড়াও তার নির্দেশে ভুক্তভোগীর কাছে ক্ষমা চান অভিযুক্তরা। এ ছাড়া ৮ই ফেব্রুয়ারি রাতে লালন শাহ হলে ভুক্তভোগী, অভিযুক্ত ও গণরুমের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসেন শাখা ছাত্রলীগ কর্মী ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী মাসুম। এ সময় তিনি ভুক্তভোগীদের কাছে ঘটনা জিজ্ঞেস করলে তারা নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দেন। পরে অভিযুক্তদের তিরষ্কার করেন মাসুম। এ সময় ঘটনা বিভাগের সিনিয়রদের কাছে বলার কারণে ভুক্তভোগীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং বাইরের কাউকে না জানাতে হুমকি দেন মাসুম। মাসুম বলেন, ওইদিন বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি। পরে কি হয়েছে কিছু জানি না। এদিকে গতকাল ঘটনার বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই উল্লেখ করে লালন শাহ হল প্রভোস্টের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ছাত্রলীগ কখনোই অভিযুক্তের পক্ষ নেয় না। আমি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি যেন এর সুষ্ঠু বিচার হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন লালন শাহ হল প্রভোস্ট ড. আকতার হোসেন ও প্রক্টর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ। সার্বিক বিষয়ে প্রো-ভিসি ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ইবি সবসময় র?্যাগিংয়ের বিষয়ে জিরো টলারেন্স। কোনো র‍্যাগিংয়ের বিষয়কে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ৭ই ফেব্রুয়ারি লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে (গণরুম) এক নবীন ছাত্রকে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগী আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ওইদিন রাতে ভুক্তভোগীকে ডাকেন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মুদাচ্ছির খান কাফী ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ সাগর। রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় ভুক্তভোগীর ওপর র‌্যাগিং ও নির্যাতন চালায় তারা। এ সময় ভুক্তভোগীকে উলঙ্গ করে বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে রাখা, বারংবার রড দিয়ে আঘাত, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও নাকে খত দেয়ানো হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। অভিযুক্তরা সবাই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *