অন্তর্বর্তী সরকারকে এনসিপি মার্কা সরকার আখ্যায়িত করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট ছিল দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু অনন্তকালজুড়ে বিচার ও সংস্কারের বাহানা দিয়ে গণতন্ত্রকে কন্টকাকীর্ণ করবেন না। আপনার সরকারে এসসিপির প্রতিনিধি আছে। বিদেশি নাগরিককে আপনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। আপনার উপদেষ্টা পরিষদে ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছে। অবিলম্বে তাদেরকে পদত্যাগ করতে বলুন অথবা আপনি তাদেরকে অপসারণ করুন। জনগণের সাথে কথা না বলেই অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের দাবিতে যদি সরকার ঘেরাও করি সেটা হবে দুর্ভাগ্যের। নিজেকে অসীম ক্ষমতার অধিকারী ভাববেন না। বিদেশে গিয়ে কি চুক্তি করে এসেছেন জানতে চান তিনি। শনিবার খুলনায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে আয়োজিত তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় খুলনা ও বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে সাম্প্রতিক কালের বৃহত্তম এই সমাবেশে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ও বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার লক্ষাধিক নেতাকর্মীর সমাগম হয়। দিনের শুরু থেকেই সমগ্র নগরী জুড়ে ছিল নেতাকর্মীদের পদচারণা। তবে তীব্র গরমে নাজেহাল হয়েছেন তারা। বিকেল ৪টার পরে তাপদাহ কিছুটা কমে এলে সমাবেশস্থল সার্কিট হাউজ মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হওয়ার পর আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় আগত কর্মীরা ছড়িয়ে পড়েন। এ কারণে সার্কিট হাউজ মাঠ ছাড়াও আশেপাশের সড়কে বিদ্যুতের খুঁটিতে কযেক শত মাইক টানানো হয়। তবে দূর দূরান্ত থেকে নেতাকর্মী আসায় দিনভর নগরী জুড়ে ছিল তীব্র যানজট। বরিশাল থেকে বৃহদাকৃতির লঞ্চেও বহু কর্মী খুলনা আসেন। 

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন নাসিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এসএম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, বাগেরহাটে আততায়ীর গুলিতে নিহত তানু ভূঁইয়ার বিধবা স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক ফখরুল ইসলাম রনি, যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান। 

২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় যাদের বয়স ১৮ বছর ছিল তারা কেউই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন সালাহাউদ্দিন আহমেদ। বলেন, চার থেকে সাড়ে চার কোটি ভোটার কেউই গণতন্ত্রের স্বাদ পাননি। শেখ হাসিনা খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল। জতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, আন্দোলন দমন করতে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে ১৪০০ ছাত্র জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্ত এই গণহত্যা চালিয়েও আওয়ামী লীগের ভেতরে কোন অনুশোচনা নেই। আওয়ামী শাসনামলে লুটপাট, অর্থ পাচার ও দুর্ণীতির নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, এগুলো আমার তথ্য না, এগুলো দুর্নীতি সংক্রান্ত শে^তপত্র কমিটি প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক, মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং আজকের তরুণ ছাত্র যুবককে সেই ৩১ দফার অ্যাম্বাসেডর হওয়ার আহবান জানান তিনি। 

সমাবেশে বিএনপির জাতীর নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, এই সমাবেশ মাধ্যমে এ অঞ্চলের তরুণদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। তরুণরা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাচ্ছে। জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি ক্ষমতায় দেখতে চায়। সমাবেশে উপস্থিত বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব হক নান্নু জানান, বাস- মিনিবাসে করে বরিশাল অঞ্চল থেকে ২০ হাজার নেতাকর্মী সমাবেশ যোগ দিয়েছে। সমাবেশ শেষে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের শিল্পূীরা সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here