বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশ থেকে ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। তবে এসব অর্থ ফেরানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পাঁচ-সাত বছর লেগে যেতে পারে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রতিবেদন প্রকাশের অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানান গভর্নর। বিপুল অঙ্কের পাচার করা এই অর্থ উদ্ধারে বিদেশিদের সহযোগিতা চাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিদেশিদের কাছে সাহায্য পাচ্ছি। যারা দেশের বাইরে টাকা পাচার করেছে, তাদের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। তবে কারা এবং কীভাবে ও কোথায় এসব অর্থ পাচার করেছে সে বিষয়ে আর কিছু বলেননি তিনি।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন আন্তঃমন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সেজন্য প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা সংশোধন করবে সরকার। অর্থ পাচার ছাড়াও দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি। আহসান মনসুর বলেন, এতে আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত থাকবে। গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথ চেষ্টা চালিয়ে যাবে। আমানতকারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ তারা একটি শক্তিশালী ব্যাংকের অংশ হয়ে যাবেন। গ্রাহকের টাকা সুরক্ষিত রয়েছে মন্তব্য করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন না করার আহ্বান জানান তিনি।
একীভূতকরণের আগে ব্যাংক রেজ্যুলেশন ফান্ড গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক তহবিল সংগ্রহ করবে বলেও জানান তিনি। তার কথায়, ব্যাংক রেজ্যুলেশন আইনের মধ্যে থেকেই ব্যাংক একীভূত করা হবে। তাতে ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। ছয়টি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা এর আগে বলেন গভর্নর আহসান মনসুর। দুর্বল ব্যাংকগুলো হলো- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।
চলতি বছর জুলাইয়ের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষে একীভূত ব্যাংকটির জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারী খোঁজা হবে বলে সোমবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিএফআইইউয়ের অনুষ্ঠানে গভর্নর আরও বলেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে প্রতিবন্ধকতার মুখে ফেলা হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট জব্দ করেনি।
অনুষ্ঠানে বিএফআইইউ পরিচালক আনিসুর রহমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তাতে এক অর্থবছরের ব্যবধানে দেশে ‘সন্দেহজনক লেনদেন’ আরও বেড়ে যাওয়ার তথ্য উঠে আসে। পরিচালক বলেন, এক অর্থবছরের ব্যবধানে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ২২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে ১৭ হাজার ৩৪৫টি। এর আগের অর্থবছরে হয়েছিল ১৪ হাজার ১০৬টি। আর্থিক খাতের গোয়েন্দা বিভাগ হিসেবে পরিচিত সংস্থাটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১১৪টি আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থায় পাঠিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারি অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে ১ হাজার ২২০টি তথ্য বিনিময় করেছে। ওই অর্থবছরে বিএফআইইউ সবচেয়ে বেশি সন্দেহজনক লেনদেনভিত্তিক প্রতিবেদন পাঠিয়েছে সিআইডি’র কাছে, ৬৮টি। এরপর দুদকের কাছে ২৫টি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে পাঠিয়েছে ১২টি। বিএফআইইউ’র প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও বিএফআইইউ’র উপ-প্রধান মো. কাওছার মতিন উপস্থিত ছিলেন।