পুলিশের পলাতক উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত দাশকে ছেড়ে দেয়ার প্রতিবাদে ও পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবিতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তর তালা দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ফলে পুলিশ কমিশনারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এ সময়ে কেএমপির সদরদপ্তর সম্মুখ সড়কে বেরিকেড দিয়ে বিক্ষোভ করছে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। ফলে ওই এলাকায় দুই কিলোমিটার জুড়ে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে নগরীর খানজাহান আলী সড়কে কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। ফলে নগরীর খানজাহান আলী সড়কের রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে টুটপাড়া কারখানার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত এসআই সুকান্ত দাশ গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে চাকরিতে যোগদান না করে পলাতক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৪টায় নগরীর ইস্টার্ন গেট এলাকায় সুকান্ত দাশকে মারধর করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন ছাত্র-জনতা। বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগে অভ্যুত্থানের পরে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু রাতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে রাতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। বুধবার সকাল থেকে খুলনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বেলা সোয়া ২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রূপসার কেএমপি ভবন ঘেরাও করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধরা সদর দপ্তরের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। এছাড়া বাঁশ ও কাঠ দিয়ে খানজাহান আলী রোডে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করে।
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা মহানগর সিনিয়র মুখপাত্র রুমি রহমান বলেন, এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেয়ার প্রতিবাদে আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমরা পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণ দাবিতে অবস্থান করছি। তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলবে। শিক্ষার্থী তসলিম হোসেন বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল ছাত্রদের ওপর হামলাকারী ও একাধিক মামলার আসামি এসআই সুকান্তকে বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু তা না করে তাকে ছেড়ে দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনারের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে।
এদিকে পুলিশ কমিশনারের অবরুদ্ধ থাকার বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ খালেদী বলেন, ‘স্যার অফিস করছেন। পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।’ কেএমপির আরেক উপ-পুলিশ কমিশনার সাকিলুজ্জামান বলেন, আমরা আইনগতভাবে বিষয়টি দেখছি। এদিকে জানতে চাইলে কেএমপির পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, এসআই সুকান্তসহ সারাদেশে অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত চলছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তাছাড়া সুকান্ত নজরদারীর বাইরে নয়। তিনি বলেন, সারাদেশে পুলিশ এমনিতেই আতঙ্কে রয়েছে। এভাবে করলে তো চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়বে। পদত্যাগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার পদত্যাগের কারণে যদি সমস্যার সমাধন হয় তাহলে আমি পদত্যাগ করতে রাজী আছি।