গাজার অভুক্ত মানুষের ওপর গুলি করে কমপক্ষে ৩১ জনকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এ খবরে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইসরাইল যে অস্ত্র দিয়ে নীরিহ সাধারণ ও অভুক্ত মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে, সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার ডাক উঠেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ওই গুলিবর্ষণের ঘটনায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ঘটনাটিকে গভীরভাবে উদ্বেগজনক বলে আখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
রোববার সকালে রাফার আল-আলামের কাছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সামনে হাজারো ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি জড়ো হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ ইসরাইলি ট্যাঙ্ক ও সেনারা তাদের দিকে গুলি ছুঁড়তে থাকে। হামাস-পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানায়, এতে ৩১ জন নিহত ও ১৭৬ জন আহত হয়েছেন। রেড ক্রস জানায়, তাদের হাসপাতালে ১৭৯ জন আহত ও ২১ জন নিহত ব্যক্তিকে নেয়া হয়। এর মধ্যে নারী, শিশুও রয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী আইডিএফ দাবি করেছে, তারা ত্রাণকেন্দ্র বা তার আশপাশে কোনো বেসামরিক নাগরিকের দিকে গুলি চালায়নি। সব রিপোর্ট মিথ্যা। তাদের দাবি সেনারা কেবল সন্দেহভাজন কিছু ব্যক্তিকে প্রতিরোধ করেছে এবং কিছু সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছে। আইডিএফ জানায়, ঘটনাস্থলে কেউ হতাহত হয়নি। ত্রাণ কার্যক্রম পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ছিল। প্রচারিত খবরগুলো সম্পূর্ণ মনগড়া ও ভিত্তিহীন।
ন্যদিকে ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ) জানায়, তাদের চিকিৎসা কেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ ও ছররা গুলিতে আঘাতপ্রাপ্ত বহু মানুষ গিয়েছেন। রোগীরা জানান, তাদের ওপর ড্রোন, হেলিকপ্টার, নৌযান ও ট্যাঙ্ক থেকে গুলি চালানো হয়। একজন সাংবাদিকের দাবি, ত্রাণকেন্দ্রের কাছে যখন লোকজন দাঁড়িয়ে ছিল, তখন ইসরাইলি ট্যাঙ্কগুলো সামনে এগিয়ে এসে গুলি চালায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, খোলা জায়গায় ছড়িয়ে থাকা মানুষ গুলির শব্দ শুনে আতঙ্কে লুকাচ্ছে। যদিও ভিডিওর সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করা যায়নি। জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেন, আমি হতবাক যে ক্ষুধার্ত মানুষ ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করা জরুরি। জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, বর্তমানে গাজায় যেভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, তা অমানবিক ও অবমাননাকর। তিন মাস ধরে খাদ্য ও ওষুধহীন মানুষগুলো এমন বিপদে পড়ে যাচ্ছে। এটি এক নিদারুণ উদাসীনতার চিত্র।
ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গুতেরেসের মন্তব্যকে ‘লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করে এবং কেন তিনি হামাসের নাম উল্লেখ করেননি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আইডিএফ ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি অভিযোগ করেন, এগুলো সব হামাসের প্রচার। কেউ নিহত বা আহত হয়নি। মিডিয়া দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে ‘হামাসের সূত্রে’ বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে।
সোমবার সকালে রাফার তাল আল-সুলতান এলাকায় একই ত্রাণকেন্দ্রের কাছে আরও তিন ফিলিস্তিনি নিহত হন। রেড ক্রস ও নাসের হাসপাতাল জানায়, তাদের কাছে ৫০ জন আহত, তিন মৃতদেহ পৌঁছায়। সিভিল ডিফেন্স জানায়, উত্তর গাজার জাবালিয়ায় একটি ঘরে ইসরাইলি বিমান হামলায় ১৪ জন নিহত হয়েছেন।