দীর্ঘদিনের অবরোধে বিপর্যস্ত গাজা উপত্যকা। সেখানে একটি নতুন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপনের একদিন পরই তা জনতার বিশৃঙ্খল ভিড়ে ভেঙে পড়ে। মার্কিন ও ইসরাইলি সমর্থনপুষ্ট সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত এই কেন্দ্রে হাজার হাজার মানুষ খাবার সংগ্রহের জন্য ভিড় জমায়। রাফাহ শহরে অবস্থিত ওই কেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যারিকেড, কাঁটাতারের বেড়া এবং মাটি উঁচু করে তৈরি সুরক্ষা বাঁধ ভেঙে পড়ে জনতার চাপে।
ভিডিওতে দেখা যায়, মানুষজন গুলির শব্দের মধ্যে দৌঁড়াচ্ছে, লুকাচ্ছে এবং বিশৃঙ্খলার মধ্যে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। জিএইচএফ জানিয়েছে, জনতার ভিড় এতটাই ছিল যে এ সংস্থার প্রতিনিধিরা কিছু সময়ের জন্য পিছু হটতে বাধ্য হয়। সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে স্থানীয় এনজিওগুলোর সহায়তায় প্রায় ৪ লাখ ৬২ হাজার খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে। ঘটনাস্থলে থাকা ইসরাইলি সেনারা সতর্কতামূলক গুলিবর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেনারা সরাসরি গুলি চালায়। ফলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এক ব্যক্তি বলেন, ৫০ জন মানুষকে ওই কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছিল। পরে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। মানুষ গেট ডিঙিয়ে ঢুকে পড়ে, একে অপরকে আঘাত করে খাবার ছিনিয়ে নেয়। এক নারী বলেন, মানুষ এতটাই ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত যে- জীবনের ঝুঁকি নিয়েও খাবার সংগ্রহ করছে। এটি ছিল চরম অপমানজনক অভিজ্ঞতা।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা জিএইচএফ-এর বিতরণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা জানিয়েছে, এ ধরণের ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা মানবিক নীতিমালার পরিপন্থি এবং এতে মানবিক সাহায্যকে রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য পূরণের জন্য ব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক বলেন, রাফাহ থেকে আসা ফুটেজ হৃদয়বিদারক। আমাদের একটি সুপরিকল্পিত, নিরপেক্ষ ও কার্যকর ত্রাণ পরিকল্পনা রয়েছে, যা সদস্য রাষ্ট্রসমূহ সমর্থন করেছে। মানবিক কার্যক্রম বাড়ানো না গেলে দুর্ভিক্ষ এড়ানো সম্ভব নয়। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জাতিসংঘের সমালোচনাকে ভণ্ডামি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, মূল বিষয় হলো গাজাবাসীকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আর কেউ তা ‘কে দিচ্ছে’ তা নিয়ে অভিযোগ তুলছে।
ওদিকে জিএইচএফ-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক জ্যাক উড সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, সংস্থার বর্তমান ব্যবস্থায় মানবিক নীতিমালা অনুসরণ সম্ভব নয়। তবে বোর্ড তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছে, যারা বর্তমান ব্যর্থ ব্যবস্থায় লাভবান, তারাই নতুন পদ্ধতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষুধায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। অব্যাহত নিরাপত্তাহীনতা, লুটপাটের আশঙ্কা ও ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের জটিলতার কারণে ত্রাণ বিতরণ কঠিন হয়ে উঠছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে গাজায় ত্রাণ বিতরণের নতুন পদ্ধতি ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক আরও গভীর হয়েছে। কোথাও খাবার পৌঁছাচ্ছে, কিন্তু তা কেমনভাবে- তা নিয়েই এখন প্রশ্ন।