হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় দফায় ফেরার পর জাতিসংঘে প্রথম ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জাতিসংঘকে নির্দয়ভাবে কটাক্ষ করেছেন। মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেয়া এই বক্তৃতায় তিনি অভিযোগ করেন, জাতিসংঘ শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে এবং উল্টো অবৈধ অভিবাসনকে উৎসাহিত করছে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর এক ধরনের আক্রমণ এবং এর ফলে এসব দেশ ‘নরকে যাচ্ছে।’ এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বৈশ্বিক উদ্যোগগুলোকেও আক্রমণ করেন। একে তিনি ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন- জাতিসংঘের উদ্দেশ্য কী? এরা কেবলমাত্র শক্ত শব্দে লেখা চিঠি পাঠায়। ফাঁপা কথায় যুদ্ধ বন্ধ হয় না। ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ভাঙা এসকেলেটর ও খারাপ টেলিপ্রম্পটার নিয়েও বিদ্রুপ করেন।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ থেকে আমি যা পেয়েছি তা হলো খারাপ এসকেলেটর আর খারাপ টেলিপ্রম্পটার। নিজের বক্তব্যে ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি সাতটি যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টা করেছেন। তবে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন এবং হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আক্রমণের পর গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ- এই দুই ক্ষেত্রেই তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের কিছু মিত্র দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়ে আসলে হামাসকে পুরস্কৃত করছে। শান্তির পথে অগ্রসর হতে হলে হামাসকে অবশ্যই জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে। ট্রাম্প ইউরোপীয় মিত্র, চীন ও ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন যে, তারা রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করেনি। তবে মস্কোর ব্যাপারে তিনি তুলনামূলক নরম অবস্থান নেন, যদিও জানান, যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে নতুন নিষেধাজ্ঞা দিতে প্রস্তুত। সবচেয়ে কঠোর ভাষা ট্রাম্প ব্যবহার করেন অভিবাসন প্রসঙ্গে।

তিনি বলেন, ওপেন বর্ডার বা উন্মুক্ত সীমান্তের ব্যর্থ পরীক্ষার অবসান ঘটাতে হবে। তোমাদের দেশ নরকে যাচ্ছে। পাশাপাশি লন্ডনের মেয়র সাদিক খানকেও (প্রথম মুসলিম মেয়র) কটাক্ষ করেন তিনি। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প আবারও চরম জাতীয়তাবাদী নীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা হ্রাস করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘ জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহায়তা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছেন। এমনকি বিদেশি বিচারকদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। এবারের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করেন, যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সাহায্য কমিয়ে দেয়ায় বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চলছে। বলেন, আমরা কোন পৃথিবী বেছে নেব? কাঁচা শক্তির পৃথিবী-নাকি আইনের পৃথিবী?

ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন। আগস্টে আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন-এর সঙ্গে সাক্ষাতের পর এটি তাদের দ্বিতীয় বৈঠক। যদিও সেই শীর্ষ সম্মেলনে কোনো সমাধান আসেনি। রাশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে এবং ন্যাটো সদস্য দেশ পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া ও রোমানিয়ার আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পরিস্থিতি আরও উত্তেজিত করেছে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেন, পুতিন তাকে খুব হতাশ করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here