ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়াজ বাংলাদেশ জুড়ে ইথারে ইথারে ভাসছে। পৃথিবীর দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের রাজনীতির দিকে। তফসিল ঘোষণা হয়েছে। নির্বাচনের তারিখও ঠিকঠাক। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পরবর্তী এবার নতুন প্রত্যাশার নির্বাচন। বিএনপি, জামায়াত এবং এসসিপি এবার আলোচনায়। জুলাই বিপ্লবের মধ্যদিয়ে সৃষ্টি হওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপিও অন্য দুই বড় দলের মতো একশ’র অধিক আসনের জন্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে বগুড়া সদর আসনও রয়েছে। এখানে এমন একজনকে প্রার্থী দিয়েছে দলটি যার সঙ্গে স্থানীয় নেতাকর্মীদের পূর্ব থেকে কোনো ধরনের সম্পর্ক ছিল না। অনেকেই ওই প্রার্থীর চেহারাও কোনোদিন দেখেননি। ছিলেন না রাজনীতির মাঠেও। ওই প্রার্থীর নাম আব্দুল্লাহ-আল-ওয়াকি। বগুড়া-৬ সদর আসনে প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করার পর থেকেই তৃণমূলে তাকে নিয়ে তৈরি হয় অসন্তোষ। প্রার্থী ঘোষণার পর বগুড়া জেলা এনসিপি’র কার্যালয়ে এসে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, বগুড়ার এনসিপি’র নেতারা সবাই একসঙ্গে লিখিতভাবে ওই প্রার্থীর বিরোধিতা করে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠাবেন। এখানে দ্রুত প্রার্থী পরিবর্তন করা না হলে প্রকাশ্যে আব্দুল্লাহ-আল-ওয়াকিকে বয়কটের ঘোষণা আসতে পারে।
এদিকে বগুড়ার এ আসনে এবার বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভোট করবেন বলে দলের পক্ষ থেকে প্রাথমিক মনোনয়নে ঘোষণা করেন। ফলে ওয়াকিকে ঘিরে আরও বেশি কথা উঠছে। কে সেই ওয়াকি। কী তার পরিচয়। এমন প্রশ্ন এনসিপি এবং সাধারণ মানুষের। জেলা এনসিপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সুলতান মাহমুদ মানবজমিনকে বলেন, আব্দুল্লাহ-আল-ওয়াকির সঙ্গে জেলার নেতৃবৃন্দর ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। কারও সঙ্গে যোগাযোগও নেই। কেন্দ্র তাকে প্রার্থী ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই তাকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। দলের বাইরেও তাকে নিয়ে সাধারণ মানুষও সমালোচনা করছে। আব্দুল্লাহ-আল-ওয়াকির ফেসবুক ওয়ালে বিতর্কিত কিছু কর্মকাণ্ডগুলোও এখন সামনে চলে আসছে। বিশেষ করে গরু খাওয়া বিরোধিতা করে দেয়া একটি পোস্ট ভার্চ্যুয়াল জগতে বেশ সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। তাকে অনেকেই ইসলাম ধর্ম বিদ্বেষী বলেও উল্লেখ করেছেন। কিছু দিন আগে আম তারেকের সঙ্গেও রাস্তায় তাকে দেখা গেছে। নানাভাবে বিতর্কিত ওই প্রার্থীকে কেন এনসিপি বেছে নিলেন তার ব্যাখ্যা স্থানীয়রা কেউ দিতে পারছেন না।
এ বিষয়ে জেলা এনসিপি’র আহ্বায়ক প্রকৌশলী এমএসএ মাহমুদ মানবজমিনকে বলেন, আব্দুল্লাহ-আল-ওয়াকিকে বগুড়া সদর আসনে থেকে মনোনয়ন দিয়েছে কেন্দ্র। তার নাম ঘোষণার পর ওই নেতাকে স্থানীয় পর্যায়ের কেউ চিনতেন না। পরে আমার সঙ্গে কথা হলে তাকে অফিসে আসতে বলি। তিনি এখন অফিসে যাতায়াত শুরু করেছেন। তার কার্যক্রমের উপর নির্ভর করবে নেতাকর্মীদের আস্থা। তিনি আরও বলেন, প্রার্থী ঘোষণার আগে কেন্দ্র স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করেননি। আব্দুল্লাহ-আল-ওয়াকির বাড়ি বগুড়ার সূত্রাপুরের ঠনঠনিয়া এলাকায়। যুক্তরাজ্য থেকে বিএসসি পাস করেছেন তিনি। ২০০৭ সালে এক-এগারোর সময় স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর ২০০৮ সালে বিকল্পধারা থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। পরে ২০১৪-১৫ সালের দিকে নিজের একটি সংগঠন তৈরি করেন। তার নাম জনতার শক্তি। দলটি পরে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পায়নি। এনসিপি বা এর কোনো অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্র বা মাঠ পর্যায়ে কোথাও তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। বিষয়গুলো নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য তার হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তারে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি।




