News Times BD

পরিবারটির কেউ বেঁচে নেই

এ যেন বিষাদের স্মৃতিচিহ্ন। চিরতরে ছিনিয়ে নিলো পরিবারটির সুখ-স্মৃতি। আনন্দের যাত্রাই হলো তাদের শেষযাত্রা। এক এক করে সবাই চলে গেলেন মৃত্যুর মিছিলে। ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও লুৎফুন নাহার দম্পতি। সন্তানদের নিয়ে ঈদের ছুটিতে যাচ্ছিলেন কক্সবাজারে। সমুদ্রসৈকতে সবাইকে নিয়ে করবেন ঈদ উপভোগ। কিন্তু সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় নিমিষেই। একটি দুর্ঘটনায় নিঃশেষ হয়ে গেল পরিবারটির সুখ-দুঃখের গল্প।

বুধবার কক্সবাজার যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মারা যান রফিকুল ইসলামসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্য। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তার মেয়ে প্রেমা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তিনদিন পর শুক্রবার তিনিও মারা যান। এ নিয়ে এই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো এগারোজন। চিকিৎসক ডা. ধীমান চৌধুরী বলেন, গুরুতর আহত প্রেমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। প্রেমার মামী জেসমিন রহমান বলেন, ডাক্তাররা চেষ্টা করেও তার জ্ঞান ফেরাতে পারেনি। পরিবারের সবাই চলে গেল। আমাদের শেষ ভরসাটাও বেঁচে রইলো না।

নিহত প্রেমার মামী সোনিয়া মানবজমিনকে বলেন, প্রেমা দুপুরে চমেক হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। দুর্ঘটনার প্রথম দিনেই প্রেমার বাবা-মাসহ দুই বোন মারা যায়। প্রেমা বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকার মিরপুরে থাকতো। আমার দুলাভাই একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। এখন তাদের পরিবারে আর কেউ নেই। প্রেমাকে নিয়ে আমাদের একটা আশা ছিল সেটিও শেষ হয়ে গেল।

যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে কক্সবাজারগামী মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়। লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মাইক্রোবাসে থাকা রফিকুল ইসলাম (৪৮), তার স্ত্রী লুৎফুন নাহার সুমি (৩৭), ছোট মেয়ে লিয়ানা ও ভাগনি তানিফা ইয়াসমিন। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যায় মেজো মেয়ে আনিশা।

একই দুর্ঘটনায় বাবা-মাকে হারান শিশু আরাধ্য (৮)। সে গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি ছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে শুক্রবার ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাকে নিয়ে দুপুরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে আসেন স্বজনরা। আরাধ্য চমেক হাসপাতালের শিশু আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল। এ দুর্ঘটনায় চমেকে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরাধ্যের স্বজন দুর্জয় কুমার মণ্ডল (১৮)।

আরাধ্যের স্বজন জগদীশ বলেন, আমরা আরাধ্যকে নিয়ে ঢাকায় এসেছি। তার মাথায় আঘাত রয়েছে। দুটি পায়ের অবস্থা খুবই খারাপ। ঘটনার দিন আরাধ্যের বাবা-মা মারা গেছে। আরাধ্যের পরিবার ঢাকার টঙ্গীতে থাকতো।

বুধবার সকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় বাস-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়। এ দুর্ঘটনায় সেদিনই ১০ জন নিহত হন। নিহতরা হলেন- ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার উত্তর বোয়ালিয়া এলাকার দুলাল বিশ্বাসের পুত্র দিলীপ বিশ্বাস (৪৩), দিলীপ বিশ্বাসের স্ত্রী সাধনা মণ্ডল (৩৭), দিলীপ বিশ্বাসের শ্বশুর আশীষ মণ্ডল (৫০), ঢাকা জেলার দক্ষিণখান থানার আজমপুর মধ্যপাড়া এলাকার কালা মিয়ার পুত্র মো. ইউসুফ আলী (৫৫), ঢাকা মিরপুরের আবদুল জব্বারের পুত্র রফিকুল ইসলাম শামীম (৪৫), রফিকুল ইসলাম শামীমের স্ত্রী লুৎফুন নাহার সুমি (৩৫), রফিকুল ইসলাম শামীমের মেয়ে লিয়ানা (৮), রফিকুল ইসলাম শামীমের আরেক মেয়ে আনীষা (১৪), একই এলাকার রফিকুল ইসলাম শামীমের ভাগিনা তানিফা ইয়াসমিন (১৬), একই এলাকার মৃত বকুল বেপারীর পুত্র ও রফিকুল ইসলাম শামীমের বন্ধু মুক্তার হোসেন (৬০)।

Exit mobile version