বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা। বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাত্রা শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির। স্টারলিংকের এই পরীক্ষামূলক সেবা উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে মহাকাশভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার ব্যবহারে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো, যা আন্তর্জাতিক মানের ইন্টারনেট সেবার প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের ভেন্যু ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টারলিংকের পরীক্ষামূলক এই ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করা হয়। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা এই সেবা ব্যবহার করতে পারছেন।
আজ বৃহস্পতিবারও সবার জন্য এটি উন্মুক্ত থাকবে। অর্থাৎ রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দু’দিন স্টারলিংক বিনা পয়সা বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে।
উদ্বোধনের পর সম্মেলনের ভেন্যুতে উপস্থিত সবাই স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পান। বিভিন্ন সাইট ব্রাউজ করার পাশাপাশি অনেকেই স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন এবং ইউটিউবে ভিডিও দেখেন।

সেবাগ্রহণকারী গণমাধ্যমকর্মী এম সাইফুল ইসলাম মোবাইলে সংযোগ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। স্টারলিংকের ইন্টারনেটের গতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, দুর্দান্ত এই ইন্টারনেট সেবা। এ সময় আশেপাশের একে অপরকে বলতে শোনা যায়, আপনি কি স্টারলিংক ব্যবহার করেছেন? সেইসঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও ধন্যবাদ জানান তারা। এ ছাড়া, সেখান থেকে স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করেই সরাসরি সম্প্রচার করা হয় সম্মেলনের কার্যক্রম।

বিনিয়োগ সম্মেলনস্থলে সরজমিন দেখা যায়, সম্মেলনের মূল প্রবেশপথের একটি স্থানে বুথ বসিয়ে সবাইকে স্টারলিংকের ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে বিএসসিএল। এ কারণে বুথটির সামনে দুপুরের পর থেকেই উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) সেখানে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা প্রদর্শন করছে। এর মাধ্যমে সম্মেলনে আসা অতিথি ও দর্শনার্থীরা সরাসরি স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা নিতে পারছেন।
বুথে উপস্থিত বিএসসিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলনে চারটি টার্মিনালের মাধ্যমে পাঁচটি ওয়াই-ফাই সংযুক্ত করে এ ইন্টারনেট সেবা দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি রাউটারের বিপরীতে একই সময়ে ৭০-১০০ জন ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন। তিনি জানান, বিটিআরসি’র নিয়ম অনুসারে, বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্টারলিংক ইন্টারনেট চালু করতে হলে তার গেটওয়ে স্টেশন স্থাপন করতে হবে। আপাতত মালয়েশিয়ার গেটওয়ে ব্যবহার করে বিনিয়োগ সম্মেলনে ইন্টারনেট সেবা দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, ফাস্ট ডটকমে দেখা যায়, বিনিয়োগ সম্মেলনস্থলে স্টারলিংকের ইন্টারনেটে ডাউনলোড গতি ১০০-১২০ এমবিপিএসের কাছাকাছি। তবে, গ্রাহকের চাপ বেশি থাকলে এই গতি কিছুটা কমে যেতে দেখা গেছে।

এর আগে গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, স্টারলিংক বিডার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে। গত ২৯শে মার্চ বিডা থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগ নিবন্ধন পায়। তবে, দেশব্যাপী বাণিজ্যিকভাবে ইন্টারনেট সেবা চালু করতে হলে প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে এনজিএসও (নন-জিওস্টেশনারি অরবিট) নীতিমালার আওতায় লাইসেন্স নিতে হবে।
বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন মহাকাশযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে স্টারলিংক। বিশ্ব জুড়ে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে তারা। বর্তমানে বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে ৪৬ লাখ গ্রাহক ব্যবহার করছেন স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট।

ইন্টারনেট সেবা পেতে কেমন খরচ হবে?
বাংলাদেশে স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরিষেবার সম্ভাব্য দাম সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। স্টারলিংক সংযোগ নিতে হলে ব্যবহারকারীদের প্রথমে একটি কিট কিনতে হয়। যার মধ্যে রয়েছে- স্যাটেলাইট ডিশ, রাউটার এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ।
স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যানুযায়ী, স্টারলিংক কিটে একটি রিসিভার বা অ্যান্টেনা, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, ক্যাবল এবং পাওয়ার সাপ্লাই থাকে। এ কিটের দাম ৩৪৯-৫৯৯ মার্কিন ডলারের মধ্যে। বাংলাদেশে এর সম্ভাব্য দাম ৬০-৭০ হাজার টাকা হতে পারে। এরপর প্রতিমাসে সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হবে, যা ১২-১৭ হাজার টাকা হতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here