বিশ্বের ফ্যাশন খাতের অধিকাংশ ব্র্যান্ড পরিবেশগত দায়বদ্ধতা থেকে সরে যাচ্ছে এমন উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি জরিপে। জরিপে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারী ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি তাদের কার্বন নিঃসরণ বাড়িয়েছে, যেখানে মাত্র ৭ শতাংশ ব্র্যান্ড প্যারিস চুক্তির ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা সীমা লক্ষ্য অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণ কমিয়েছে। পরিবেশবাদী সংগঠন স্ট্যান্ডডটআর্থ প্রকাশিত ‘২০২৫ ফসিল ফ্রি ফ্যাশন স্কোরকার্ড’-এ বলা হয়, ফ্যাশন শিল্প বর্তমানে বিশ্বের মোট জলবায়ু দূষণের কমপক্ষে ৪ শতাংশের জন্য দায়ী এবং এই খাত থেকে নিঃসরণ বাড়ছে বলেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষণ করা ৪২টি গ্লোবাল ব্র্যান্ডের মধ্যে এইচ অ্যান্ড এম সর্বোচ্চ স্কোর (‘ই+’) পেয়েছে জলবায়ু দায়বদ্ধতা, সরবরাহকারীদের ডিকার্বনাইজেশনে সহায়তা এবং জলবায়ুবিষয়ক কার্যকর অ্যাডভোকেসির জন্য। বিশেষভাবে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এইচ অ্যান্ড এম-এর পরিবেশবান্ধব উদ্যোগকে প্রতিবেদনে প্রশংসিত করা হয়।

পরিবেশগত দায়বদ্ধতাজরিপে উঠে আসে আরও যেসব তথ্য : মাত্র তিনটি ব্র্যান্ড (৭ শতাংশ) প্যারিস চুক্তির ১.৫ ডিগ্রি কার্বন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নিঃসরণ হ্রাস করেছে। ১৪টি ব্র্যান্ড (৩৩ শতাংশ) উল্লেখযোগ্যভাবে দূষণ কমালেও তা চুক্তির মানদণ্ডে পৌঁছায়নি। বিপরীতে ১৭টি ব্র্যান্ড (৪০ শতাংশ) দূষণ বাড়িয়েছে, যা ইতিবাচক অগ্রগতির চেয়ে ৬ গুণ বেশি। সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্যটি এসেছে ই-রিটেইলার শিন সম্পর্কে, যারা মাত্র দুই বছরে নিঃসরণ ১৭০ শতাংশ বাড়িয়ে ফেলেছে। বর্তমানে এই একক প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক দূষণ লেবাননের সমপরিমাণ।

 

অন্যান্য ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে : টার্গেট, পিভিএইচ, নেক্সট, বুউহু, আরিতজিয়া, কলাম্বিয়া ও আন্ডার আর্মার- যারা দূষণ বা জ্বালানি খাতে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ বা লক্ষ্য নির্ধারণ করেনি।

তবে আশার আলো কিছুটা আছে : আইলেন ফিশার ‘ই-’ পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও পুনঃচক্রযোগ্য উপকরণের জন্য। লুলুলেমন ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের সরবরাহ চেইনে ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৯৫ শতাংশ ব্র্যান্ড এখন রিসেল বা রিপেয়ার প্রোগ্রাম চালু করেছে, যা সার্কুলার বিজনেস মডেলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রতি ইঙ্গিত দেয়। তবে গবেষকরা বলেন, আসল দূষণ হয় সরবরাহ চেইনের শুরুর দিকে, যেখানে ব্র্যান্ডগুলোর প্রকৃত সহায়তা এখনো অপর্যাপ্ত।

স্ট্যান্ডডটআর্থ-এর নির্বাহী পরিচালক টড পাগলিয়া বলেন,  ‘বেশির ভাগ ব্র্যান্ড সময়ের গুরুত্ব বুঝছে না কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে দায় এড়াচ্ছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিল্পে পরিবর্তনের সক্ষমতা আছে কিন্তু এখনো অনেকে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েই দায়িত্ব সারছে।’ স্ট্যান্ডডটআথ-এর সিনিয়র ক্লাইমেট ক্যাম্পেইনার র‌্যাচেল কিচিন, বলেন, ‘ফ্যাশন শিল্প এখন একটি সন্ধিক্ষণে। ব্র্যান্ডগুলোকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে- তারা পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেবে, নাকি জলবায়ু সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।’ তিনি নীতিনির্ধারক, শিল্প সংস্থা এবং নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে ব্র্যান্ডগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হতে বাধ্য করা যায় এবং বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here