News Times BD

রিমান্ড শুনানিতে নতুন তথ্য কবিরের : হাদিকে গুলি

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. কবির রিমান্ড শুনানিতে নতুন তথ্য দিয়েছে। গ্রেপ্তার কবির হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সোমবার রাতে তাকে নারায়ণগঞ্জের একটি ইটভাটা থেকে গ্রেপ্তারের 
তথ্য জানিয়ে র‌্যাব বলেছিল, কবির ৫ই ডিসেম্বর ফয়সাল করিমের সঙ্গে বাংলামোটরে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিল সেখানকার পরিস্থিতি দেখে আসতে। গতকাল বিকালে এই মামলায় কবিরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহম্মেদ। তিনি আদালতে বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আসামি কবির ও ফয়সালসহ অন্য আসামিরা ওসমান হাদির কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিল। তাছাড়া হান্নানের বিক্রি করা মোটরসাইকেলের মালিক কবির। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. কাইয়ুম হোসেন বলেন, কবির ঢাকার আদাবর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক। মোটরসাইকেলযোগে গিয়ে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়েছে। তার জীবন এখনো সংকটাপন্ন। এ ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সালসহ কবির হাদির কাছে গিয়েছিল। সেখানে তার ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর সে আত্মগোপনে চলে যায়। এ হত্যাচেষ্টার সঙ্গে আর কে কে জড়িত, সেটা জানার জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন।

আদালতে শুনানিতে কবিরের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না। বিচারক কবিরের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনার কিছু বলার আছে?’ তখন কবির বলে, ‘স্যার, আমি ১৮ দিন আগে উনার (ফয়সাল করিম) গাড়ি (মোটরসাইকেলে ট্রিপ) ও পাঠাও চালাইতাম। উনি আমাকে ফোন দিলে আমি যেতাম। বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেত। ১৮ দিন আগে ফয়সাল আমাকে বলেছে, আমি হাদির সঙ্গে ব্যবসা করি, তার নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করি। তার কাছে যাবো। আমি যেতে চাইনি, এরপরও উনি আমাকে নিয়ে গেছেন। এই আমার অপরাধ স্যার।’ এপর্যায়ে বিচারক প্রশ্ন করেন, মোটরসাইকেলের মালিক কে? জবাবে কবির বলে, ‘মোটরসাইকেলটা আমার এক বন্ধুর। আমি গাড়ি (মোটরসাইকেল) কিনতে গেছি। সেও গাড়ি কিনতে গেছে। সে আমার আইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) দিয়ে গাড়ি কিনছে।’ বিচারক বলেন, তার নাম কি? কবির বলে, ‘স্যার, মাইনুদ্দিন ইসলাম শুভ।’ তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ওই মোটরসাইকেল ব্যবহার করে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়েছে। শুনানি শেষে বিচারক কবিরের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক দাবি করে মো. আব্দুল হান্নান নামে একজনকে গ্রেপ্তার ও আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গত রোববার আদালতে রিমান্ড শুনানিতে হান্নান বলেছিল, আটকের পর সে র‌্যাবকে বলেছিল, তাকে শোরুমে (বিক্রয়কেন্দ্র) নিয়ে যেতে। তাহলে আসল সত্য বেরিয়ে আসবে। পরে পুলিশকেও একই কথা বলেছিল। কিন্তু তারা কেউ তার কথা শোনেনি। মোটরসাইকেলটি তার নয় দাবি করে হান্নান সেদিন বলেছিল, মোটরসাইকেলটি সে মিরপুর মাজার রোডের ওই শোরুম থেকে কিনেছিল। কিন্তু হাতে সমস্যা হওয়ায় সে চালাতে পারছিল না। একপর্যায়ে সেটি ওই শোরুমে বিক্রি করে দেয়। দুই মাস আগে মালিকানা বদলের জন্য শোরুম থেকে ফোন করা হলেও অসুস্থ থাকায় যেতে পারেনি।

এর আগে ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু ও বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। রোববার হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পরিবারের সম্মতি নিয়ে রোববার রাতে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।
এ ঘটনায় কবিরসহ র‌্যাব ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে হাদিকে গুলির সময় যে মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছিল সেটির মালিক আব্দুল হান্নানকে প্রথমে আটক করে। পরে তাকে পুলিশে হস্তান্তরের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর হত্যাচেষ্টার মামলায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু ও ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ ছাড়া হাদিকে গুলিবর্ষণকারীদের পালানো ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারির মধ্যে শেরপুরের নালিতাবাড়ী এলাকা থেকে দু’জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

শরীফ ওসমান বিন হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গিয়ে তিনি আক্রান্ত হন। চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করে চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুলিটি লাগে হাদির মাথায়। গুরুতর আহত হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার দুপুরে এয়ার এম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

Exit mobile version