সর্বশেষ
[glt-translator]
Home » অন্যান্য » শিশু মুনতাহা হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ

শিশু মুনতাহা হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ

সিলেটের কানাইঘাটে ছয় বছর বয়সী শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনকে হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে পুলিশ। মা ও নানীকে সঙ্গে নিয়ে সাবেক গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়া শিশু মুনতাহাকে হত্যা করে মরদেহ পুঁতে রাখে। এরপর মরদেহ সেখান থেকে সরানোর আগেই ধরা পড়ে। তবে কী কারণে তারা ছোট্ট শিশুটিকে হত্যা করেছে তার কারণ সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট করে কিছু জানতে পারেনি পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটকরা হলেন- মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়া, তার মা আলিফজান বিবি এবং নানি কুতুবজান বিবি।

গত ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরে শিশু মুনতাহা। পরে আশপাশের বাড়িতে শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু বিকেলে হলে বাড়ি না ফিরলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। তারপর তাকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি।

প্রিয়মুখটির সন্ধান পেতে স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও পায়নি। অবশেষে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। শিশুটির সন্ধান পেতে জোর তৎপরতা চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটিও। মুনতাহার নিখোঁজের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। শিশুটির সন্ধান দিতে পারলে দেশ–বিদেশ থেকে অনেকেই পুরস্কার ঘোষণা করেন। অবশেষে রোববার ভোররাতে শিশুটির খোঁজ মিলল ঠিকই। তবে জীবিত নয়, নিথর দেহে বাড়ির পাশের পুকুর সন্ধান মেলে ছোট্ট মুনতাহার।

কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল বলেন, গত ৩ নভেম্বর মুনতাহাকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ওইদিনই তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর মরদেহ ঘরের পাশের একটি খালে কাঁদামাটিতে চাপা দিয়ে রাখা হয়। আজ ভোরে আলিফজান বেগম মরদেহ সরানোর চেষ্টাকালে স্থানীয়রা দেখে ফেলেন। এ সময় স্থানীয় থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এ সময় মর্জিয়া, তার মা ও নানিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে কী কারণে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার কানাইঘাট (সার্কেল) অলক কান্তি শর্মাও এমন তথ্য দিয়েছেন।

শিশু মুনতাহার মরদেহের সন্ধান মেলে যেভাবে

জানা যায়, গতকাল রাতে সন্দেহজনকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়াকে থানায় নেয় পুলিশ। তার আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে মার্জিয়ার বাড়িতে মুনতাহার সন্ধানে তল্লাশি চালায় স্থানীয়রা। রাত সাড়ে তিনটার দিকে মার্জিয়ার বাড়ির আশপাশে তল্লাশি চালানোর একপর্যায়ে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখেন। আটকাতে চাইলে তিনি দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয়রা কাদামাটি মাখা মুনতাহার মরদেহ দেখতে পান। পরে মার্জিয়ার মাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।

কানাইঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমদ বলেন, মুনতাহার নিখোঁজের পর থেকে পুলিশ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছিল। কিন্তু কোনো ক্লু পাচ্ছিল না। শনিবার স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে মার্জিয়ার আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়। পরে রাতে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্যকে মার্জিয়ার বাড়ির আশপাশে মাটি খোঁড়া আছে কি না খোঁজ নিতে বলেন।

তিনি বলেন, মুনতাহার স্বজনসহ স্থানীয়রা রোববার রাতভর মাটিখোঁড়া কোনো জায়গা আছে কি না খুঁজতে থাকেন। ফজরের আজানের আগ মুহূর্তে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখেন। এ সময় তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। পরে কাদামাটি মাখা মুনতাহার লাশ দেখতে পান।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, মার্জিয়া মুনতাহার প্রতিবেশী। মার্জিয়ার মা ও নানী একসময় ভিক্ষা করতেন। মুনতাহাকে বাড়িতে পড়াতেন মার্জিয়া। মার্জিয়াকে তার স্বামী ছেড়ে চলে গেছেন। ফলে বাড়ির বাইরে গেলে মুনতাহাকে সঙ্গে নিতেন মার্জিয়া। সবাই তাকে বিশ্বাসও করতেন। তবে কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা জানা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *