নির্বাচনের কোনো চিন্তাই ছিল না সিলেটের জাতীয় পার্টির নেতাদের। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যে যার মতো চলছিলেন। দলের কার্যক্রমেও ছিল না গতি। তবে জাতীয় পার্টির নেতাদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে ভোটের মাঠে আলোচনা ছিল। দু’দিন আগে থেকে হঠাৎ তোড়জোড়। ঘুমন্ত নেতারা গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠেন। কেন্দ্র সরব।  দেশের ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিচ্ছে জাতীয় পার্টি। ঢাকার পার্টি অফিসও চাঙ্গা। স্থানীয় পর্যায়ের নেতারাও নড়েচড়ে বসেন। তৃণমূলেও কথাবার্তা শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় সিলেট জাতীয় পার্টির নেতারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন ঢাকায়। গতকাল তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন কিনে জমা দিয়েছেন। এরপর নেয়া হয় প্রার্থীদের ইন্টারভিউ। 

নেতারা জানিয়েছেন- সিলেটের ১৯টি আসনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের নাম ঘোষণা যেকোনো সময় হতে পারে। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের পক্ষ থেকে এ নাম ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে সিলেটের ৬টি আসনের কয়েকজন নেতা গ্রিন সিগন্যালও পেয়েছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে তাদের বলা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন- এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে সিলেট জেলার ৬টি আসনেই শক্তিশালী প্রার্থী থাকছেন। এর মধ্যে কয়েকজন রয়েছেন পাসের প্রার্থীও। তারা দীর্ঘ দিন ধরে ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। সুতরাং এসব প্রার্থীকে নিয়ে এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বাজিতে নামবে। যদি ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হয় তাহলে কয়েকটি আসনে জাতীয় পার্টি জয়লাভ করতে পারে বলে জানান তারা। ঢাকার অবস্থানরত প্রার্থীরা জানিয়েছেন- সিলেটের ৬টি আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে একাধিক নেতা দলীয় প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। ফলে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াটিও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য খোঁজখবর নেয়ার পর চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে। সিলেট-১ আসনে জাতীয় পার্টি ভুগছিল প্রার্থী সংকটে। তবে মর্যাদাপূর্ণ এ আসন থেকে প্রার্থী হতে চান বিগত দিনে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। তিনি ইতিমধ্যে দলীয় ফোরামে তার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী না থাকায় এ আসনে জাপা’র প্রার্থী হতে পারেন মাহবুবুর রহমানই। তার বাড়ি বিশ্বনাথে। তিনি বনেদি পরিবারের সন্তান। বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। দলটির প্রবীণ নেতা হিসেবেও পরিচিত। সিলেট-২ আসনে প্রার্থী হতে চান সাবেক এমপি ও দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মকসুদ ইবনে আজিজ লামা। তিনি আসনের পরিচিত মুখ। ’৯১-এর এমপি হওয়ায় ভোটের মাঠে তার পরিচিতি রয়েছে। গত কয়েকটি নির্বাচনে তার নামও আলোচিত হয়েছে।

এ ছাড়া এ আসন থেকে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন মাহবুবুর রহমান চৌধুরীও। তবে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে তার নাম চূড়ান্ত হলে তিনি সিলেট-২ আসনে প্রার্থী হবেন না। এ ছাড়া জয়নুল আবেদীন নামে জাতীয় পার্টির আরেক নেতা এ আসনে দলের মনোনয়ন কিনেছেন, জমাও দিয়েছেন। সিলেট-৩ আসনে ভোটের মাঠে নামছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে তিনি এ আসনে প্রার্থী হয়ে আসছেন। তবে জয়ের দেখা পাননি। এবারের নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি’র ভেতরে কোন্দল বেশি। ফলে আতিক ‘ট্রাম্পকার্ড’ নির্বাচনে ম্যাজিক হতে পারেন বলে জানিয়েছেন নেতারা। সিলেট-৪ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন ছাত্র সমাবেশের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও সিলেটের সভাপতি মুজিবুর রহমান ডালিম। তার প্রতি এবার কেন্দ্রের সুনজর রয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলেও ডালিম ভোটের মাঠে সক্রিয় ছিলেন। তার সঙ্গে স্থানীয় জাপা নেতা আশিক আহমদ নামে আরও একজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এ আসনে ডালিমকেই কেন্দ্রের পছন্দ বেশি।

ইতিমধ্যে ডালিমকে দলের তরফ থেকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে। সিলেট-৫ আসনে দলীয় মনোনয়নে জাতীয় পার্টিতেও লড়াই চলছে। এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চান জেলা জাপা’র সভাপতি আলহাজ শাব্বির আহমদ। তিনিও আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন। তবে আসনের সাবেক এমপি ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সেলিম উদ্দিনও চাইছেন এ আসনে প্রার্থী হতে। সেলিম উদ্দিনের বাড়ি সিলেট-৬ আসনে। সেখান থেকেও তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইছেন। যদি সেলিম উদ্দিন নিজ এলাকায় চলে যান তাহলে শাব্বির আহমদ হতে পারেন দলের প্রার্থী। তবে সিলেট-৬ আসনে সেলিম উদ্দিনের পাশাপাশি জাতীয় পার্টির নেতা প্রবাসী আব্দুন নুর ও যুক্তরাজ্যের সভাপতি এবাদুর রহমানও প্রার্থী হতে চাইছেন। তারা ইতিমধ্যে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমাও দিয়েছেন। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শাব্বির আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, জেলার সব আসন থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুকরা মনোনয়নপত্র কিনে দলের কাছে জমা দিয়েছেন। প্রবাসে অবস্থানরত কয়েকজন ছাড়া বাকিদের ইন্টারভিউ গতকাল সোমবার বিকালে শেষ হয়েছে। এখন দল থেকে চূড়ান্ত করা হচ্ছে প্রার্থী তালিকা। যেকোনো সময় ঘোষণাও দেয়া হতে পারে বলে জানান তিনি। সিলেট-৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুজিবুর রহমান ডালিম জানিয়েছেন-সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় অফিস থেকে তিনি ফোন পেয়েছেন। তার মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তিনি রাতেই দলের অনুমোদনপত্র হাতে পাবেন। এভাবে একেক করে সকল প্রার্থীর কাছে দলের মনোনয়ন প্রাপ্তির চিঠি দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here