ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের রাজিপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, প্রকাশ্যে ঘুষ নেয়া-সংক্রান্ত একটি ভিডিও হাতে এসেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ভূমি কর্মকর্তা সানোয়ারের নির্দেশে জমি খারিজ করে দেয়ার কথা বলে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নিচ্ছেন অফিস সহকারী আহম্মদ। এ সময় ২০ শতাংশ জমি খারিজ করে দিতে ১৮ হাজার টাকা চান আহম্মদ। পরে দর কষাকষি করে ১৫ হাজার টাকা নেন তিনি, বাকি তিন হাজার টাকা পরে দিতে বলা হয়। এই টাকার ভাগ ভূমি কর্মকর্তা সানোয়ারের হাতে যাবে বলে জানানো হয়।
ভিডিওতে আহম্মদকে বলতে শোনা যায়, এর আগে অন্য আরেক ব্যক্তির কাছ থেকে জমি খারিজ বাবাদ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ভূমি কর্মকর্তা সানোয়ারের বাড়ি ভূমি অফিসের কাছাকাছি। তিনি এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। ফলে নিজের ইউনিয়নের ভূমি অফিসে এসে ঘুষ বাণিজ্য পসরা সাজিয়ে বসেছেন তিনি। এলাকার সবার সঙ্গে তার পরিচয় থাকায় নিজ হাতে ঘুষ গ্রহণ না করে অফিস সহকারী আহম্মদ ও অস্থায়ী ভিত্তিতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করা হিরনকে ঘুষের দরকষাকষি ও তা সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। সরকারি খরচের সঙ্গে অতিরিক্ত টাকা (ঘুষ) না দিলে পোষায় না এ কর্মকর্তার। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না তার মাধ্যমে।
মাহফুজ আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির অভিযোগ, নিজের জমি খারিজ করতে সানোয়ারকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
নিউজবাংলাকে মাহফুজ বলেন, ‘খারিজ (জমি) করতে গেলে ভূমি কর্মকর্তার সহকারী আহম্মদের মাধ্যমে ইচ্ছামতো টাকা দাবি করা হয়। শুধুমাত্র সরকারি খরচে কখনওই ভূমি অফিসে কাজ করা যায় না। তো আহম্মদ ১৮ হাজার টাকা দাবি করলে নগদ ১৫ হাজারে মিটিয়েছি।’
উজ্জ্বল নামের আরেকজন বলেন, ‘মাস তিনেক আগে আমার কাছ থেকেও ভূমি কর্মকর্তা সানোয়ারের নির্দেশে জমি খারিজ বাবদ ১২ হাজার টাকা নিয়েছে কম্পিউটার অপারেটর হিরন। এই ভূমি অফিস থেকে ঘুষখোর ভূমি কর্মকর্তাকে সরানো প্রয়োজন।’
মেহেদী হাসান মঞ্জু নামে আরও একজন বলেন, ‘আমার ৪০ শতাংশ জমি খারিজ করতে গেলে ৬০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। আমি টাকার পরিমাণ কমাতে বললেও কমায়নি। এত টাকা আমার পক্ষে দেয়া অসম্ভব, তাই এখনও খারিজ করাতে পারিনি।’
এ বিষয়ে জানতে ভূমি অফিসের সহকারী আহম্মদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা। ভিডিও থাকলেও ঘুষ নেয়ার বিষয়টি তিনি পুরোপুরি অস্বীকার করে বসেন। বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে টাকা নিইনি।’
‘আপনি খারিজ বাবদ ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন, ভিডিওতে এটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে’- জানালে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফোন কেটে নম্বরটি বন্ধ করে দেন।
পরে রাজিবপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অনুমিতভাবেই নিজের সাফাই গেয়ে তিনি বলেন, ‘আমার নির্দেশে আহম্মদ-হিরন টাকা নেয় না। আহম্মদ ওই টাকা কেন নিয়েছিল তা আমার জানা নেই।’
তার দাবি, ‘আমি ভেজাল কাজ করি না বলেই কিছু লোক ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ এনে আমার বিরুদ্ধে বদনাম ছড়াচ্ছে। ওই ভিডিওটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি তদন্ত করা হবে। ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ মিললে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’