বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার কথা বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের অতিমারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে জিনিসের দাম বেড়েছে। নতুন করে আবার হামলা (ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলা) শুরু হয়েছে, যে কারণে হয়তো সামনে আরও দুর্দিন আসতে পারে। গতকাল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় উপজেলা পরিষদ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মাটি ঊর্বর। আমাদের মানুষ আছে। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। পাশাপাশি হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল পালনসহ আমাদের খাদ্য আমাদের উৎপাদন করতে হবে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বেড়েছে, বাংলাদেশেও জিনিসের দাম বেড়েছে। দেশের মানুষের খাবারের যাতে অভাব না হয়, সেই ব্যবস্থা আমাদের নিজেদের করতে হবে। তিনি বলেন, সকল ষড়যন্ত্র ভেদ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
সবাই একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত এবং স্মার্ট সোনার বাংলা ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের বিজয় হয়েছে। এ জয় গণতন্ত্রের, এ জয় বাংলাদেশের মানুষের। কাজেই দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সুষ্ঠুভাবে দেশের জনগণ তাদের ভোট দিতে পেরেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫-এর পর নির্বাচনগুলোতে জনগণের ভোট ছিল না।
মিলিটারি ডিকটেটর এসে ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ আসার পর থেকে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে। সেই সঙ্গে মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে। সবার জীবন যেন অর্থবহ, উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হয় তার কাজটা আমরা করেছি। যার কারণে যতবার নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছে বাংলাদেশের মানুষ তাতে সাড়া দেয়নি। আসলে মানুষ কিন্তু তার ভোটটা চুরি করলে সে ধরে নেয়। দৃষ্টান্ত হচ্ছে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন। খালেদা জিয়া সে সময় একটা নির্বাচন করেছিল। সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা এবং সশস্ত্র বাহিনী সবাইকে নামিয়ে দিয়ে তারা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে। কিন্তু সেখানে ভোটার যায়নি। তারপর সিল মেরে ভোট নিলেও তা ২২ শতাংশের বেশি হয়নি। জনগণ মেনে নেয়নি। তারা যে ভোট চুরি করেছে। যে কারণে আন্দোলন হলো। আর ৩০শে মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হলো। ভোট চুরির অপরাধে নাকে ক্ষত দিয়ে খালেদা জিয়ার বিদায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা এখন আন্দোলন করে গণতন্ত্রের জন্য। যারা গণতন্ত্রের গ-ও বুঝে না। তাদের আন্দোলন মানুষ পুড়িয়ে মারা। তারা জানে জ্বালাও-পোড়াও। আন্দোলনের নামে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। বাসে, লঞ্চে, গাড়িতে, রেলে আগুন দিয়েছে। ২০১৩ সালে যেটা করেছে সেটা ২০১৪, ২০১৫ সালে করেছে এবং এবার করেছে।
এমনভাবে পুড়েছে যে, মা সন্তানকে বুকে নিয়ে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। এ দৃশ্য কোনো মানুষ সহ্য করে না। যার কারণে তারা যতই চিৎকার চেঁচামেচি করুক তাদের কথায় দেশের মানুষ সাড়া দেয়নি। যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করেছে তাদের কোনো ছাড় নাই। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেবো। কারণ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশÑ মানুষের হাতে মোবাইল ফোন, সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা আছে। যারা এই কাজগুলো (জ্বালাও-পোড়াও) করছে তাদের খুঁজে বের করা হবে। ইতিমধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা জ্বালাও- পোড়াওয়ের জন্য হুকুম দিয়েছে, তাদেরও আমরা গ্রেপ্তার করছি। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি যেন আর যেন কেউ এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে না পারে, এটাই আমরা চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সামনে অনেক কাজ, আমরা যে কাজগুলো করে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছি, এটাকে আমাদের টেকসই করতে হবে। এটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আপনারা জানেন, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত কখনো শেষ হয় না, কাজেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, শক্ত একটি ঘাঁটি আছে বলেই যেকোনো ষড়যন্ত্র আমি মোকাবিলা করতে পারি। আপনারা আমার শক্তি। টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়ার মানুষই আমার বড় শক্তি, বাংলাদেশের জনগণ আমার শক্তি। আগামীতেও বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ, এখন যেগুলো বাকি আছে আমরা সেগুলো করবো।
গ্রামের মানুষ শহরের সব নাগরিক সুবিধা পাবে। আমার গ্রাম আমার শহর, সেভাবে প্রত্যেকটা গ্রাম গড়ে তুলবো। যাতে কোনো মানুষের কষ্ট না হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ কাজ করলে এ দেশকে কেউ পেছনে টানতে পারবে না। যারা কখনো এ দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে দিতে চায়নি, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, তারা বাংলাদেশের কখনো উন্নতি চায় না। সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আলহাজ কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান বক্তব্য রাখেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহেনা, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি, কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান হাজরাসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।