রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার মিরপুর রোডের একটি বেসরকারি এনজিও অফিসের নিরাপত্তাকর্মী জুয়েল মিয়াকে ঘুমন্ত অবস্থায় নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে আরেক নিরাপত্তাকর্মী আখতার। হত্যায় জড়িত আখতারকে গ্রেপ্তার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। পুলিশ বলছে, আখতারের ভাসমান যৌন কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এমন একজনের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় নির্মমভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
তিনি বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ জানতে পারে মিরপুর রোডের একটি বেসরকারি এনজিও’র কার্যালয়ের পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের ভেতর থেকে নিরাপত্তাকর্মী জুয়েলের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাশ পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। এই ঘটনার তদন্তে নেমে ভবনের রাতের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ। ভিডিওতে দেখা যায়, ২৩শে জানুয়ারি ভোর ৫টা ৬ মিনিটের দিকে অপর নিরাপত্তাকর্মী আক্তার হোসেন একটি স্টিলের পাইপ হাতে ভবনের দক্ষিণ পাশের চেয়ারের উপরে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে থাকা নিহত জুয়েল মিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। লাঠি দিয়ে জুয়েলকে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। এতে জুয়েল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
মাটিতে পড়ার পরেও আক্তার তাকে নৃশংসভাবে পেটাতে থাকে। এরপর আখতার মাটিতে পড়ে যাওয়া জুয়েলের হাত ধরে টেনেহিঁচড়ে পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের দিকে নিতে থাকে। টেনেহিঁচড়ে নেয়ার সময়ও আক্তার হাতে থাকা স্টিলের পাইপ দিয়ে জুয়েলকে ৩ দফায় পেটায়। লাঠির আঘাতে জুয়েলের মাথা, চোখ, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে যখম হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের ফলে মৃত্যু নিশ্চিত করে আখতার। এরপর জুয়েলের হাত বেঁধে কম্বল মুড়িয়ে পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের ভিতর ঢুকিয়ে রুমটি বন্ধ করে দিয়ে পালিয়ে যায়। হত্যার পরে আখতার আলামত নষ্ট করে।
আজিমুল হক বলেন, এই ঘটনায় নিহতের পরিবার মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্তে নেমে নিরাপত্তাকর্মী আখতারকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার এলাকার একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আখতার হোসেন দেড় বছর ধরে ওই এনজিও কার্যালয়ে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছে। জুয়েল মিয়া চলতি মাসের এক তারিখ একই প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে যোগ দেয়। জুয়েল মিয়া ডিউটি চলাকালে প্রায় সময়ই অফিসের বাইরে যেতে চাইলে আখতার হোসেন তাতে বাধা দিতো। এতে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। আখতার আগে থেকে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাদে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সে এটির সুযোগ নিয়ে অন্যদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করতো। জুয়েল এটি মেনে নিতে পারেনি।
তিনি বলেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আসামি আখতার তার বান্ধবী পরিচয়ে এক যৌনকর্মীকে রাতে অফিসে নিয়ে আসে এবং তাদেরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে। বিষয়টি নিয়ে নিহত জুয়েল আখতার সবাইকে জানিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। এনিয়ে তাদের মধ্যে চরম বিরোধ জন্মায়। ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে জুয়েল আসামি আখতারের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়। রাত ১টার দিকে আখতার এনজিও অফিসের পিওন সতেজ চাকমা ও আল আমিনকে বিষয়টি জানালে তারা নিচে আসে। এ সময় জুয়েল মোবাইলটি আল আমিনের কাছে জমা দেয়। এই ঘটনার ক্ষোভের জেরে ভোর ৫টার দিকে জুয়েল মিয়া ডিউটিরত অবস্থায় ভবনের দক্ষিণ পাশে চেয়ারের ওপর কম্বল মুড়িয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় একটি লোহার পাইপ নিয়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যার পর ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য লাশটি টেনেহিঁচড়ে পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমে নিয়ে যায়। সেখানে নিহত জুয়েলের হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে কম্বল মুড়িয়ে সাব-স্টেশনের ভেতরে লুকিয়ে রেখে রুমটি বাইরে থেকে লাগিয়ে দেয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার পাইপটি ফেলে দেয়। হত্যার সময়ে ভবনের অপর দুই নিরাপত্তাকর্মী অন্য রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন।