পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা গ্রাহকের টাকা আগামী এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে ইভ্যালিকে। চারটি কিস্তিতে এ অর্থ পরিশোধের সুযোগ পাবে প্রতিষ্ঠানটি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- সময়সীমা মেনে অর্থ পরিশোধ করছে কি না সেটি মনিটরিং করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের একজন উপসচিবের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সভায় ইভ্যালির এমডি মো. রাসেল উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অর্থ ফেরতে সরকারের এ সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মো. রাসেল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এ টাকা পেমেন্ট গেটওয়েতে আছে। আমি শুধু ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের তালিকা দেব। ওই তালিকা অনুযায়ী গেটওয়েগুলো অর্থ ফেরত দেবে। পেমেন্ট গেটওয়ের বাইরে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইভ্যালির এমডি জানান, পর্যায়ক্রমে তাও ফেরত দেওয়া হবে। এমনকি টাকা ফেরত দিয়ে কিছু গ্রাহকের হিসাব আজ নিষ্পত্তি করবেন বলেও জানান তিনি। সূত্র জানায়, ইভ্যালিতে গ্রাহকদের কী পরিমাণ অর্থ পাওনা রয়েছে তার পরিপূর্ণ হিসাব নেই সরকারের ডিজিটাল কমার্স সেলের কাছে। শুধু পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থের একটা হিসাব পাওয়া গেছে। সেই টাকাই এপ্রিলের মধ্যে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই হিসাব অনুযায়ী নগদের কাছে ১৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, বিকাশের কাছে ৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা, এসএসএল কমার্সের কাছে ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা আটকে ছিল। ইভ্যালির এমডি মো. রাসেলের জামিনের আগে ২ হাজার ৮৮২ জন গ্রাহককে ১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। রাসেল জেল থেকে বের হয়ে ‘বিগ ব্যাং’ নামে নতুন অফার ছেড়ে আবার ব্যবসা শুরু করেছেন। জানা গেছে, ইভ্যালির নতুন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ‘বিগ ব্যাং’ অফার নিয়েও প্রশ্ন ওঠে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভায়। শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইভ্যালি ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে যে অফার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা পর্যালোচনা করে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ করে কি না সেটি যাচাই করা হবে।
ভোক্তায় ২৩৪ গ্রাহক টাকা পাবেন আজ : পেমেন্ট গেটওয়ের বাইরে যে লেনদেন হয়েছে-সেখান থেকে ২৩৪ গ্রাহকের হিসাব আজ নিষ্পত্তি করা হবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে গ্রাহকদের এ অর্থ দেওয়া হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ইভ্যালির এমডি মো. রাসেল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তার প্রতিষ্ঠানের বিগ ব্যাং অফার থেকে যে মুনাফা করেছেন, তারই একটি অংশ দিয়ে ২৩৪ গ্রাহকের হিসাব নিষ্পত্তি করবেন তিনি। গ্রাহকদের দাবি অনুযায়ী প্রায় ১৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে।
পেমেন্ট গেটওয়ের বাইরের টাকার হিসাব মেলেনি : ই-কমার্স পণ্যের অর্ডারের নামে লাখ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা নিলেও সে টাকার ঠিকঠাক হিসাব মেলেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভায় এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির এমডি রাসেল যে তথ্য দিয়েছেন তার যথার্থতা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিজিটাল কমার্স সেল। সূত্র জানায়, ইভ্যালির এমডি রাসেল জানিয়েছেন, ইভ্যালি মোট ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকার পণ্য গ্রাহকদের সরবরাহ করা হয়েছে। তার হিসাবে গ্রাহকদের পাওনা রয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। তবে পণ্যের অর্ডার ও সরবরাহের পরিমাণ সম্পর্কে রাসেল যে তথ্য দিয়েছেন, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিজিটাল কমার্স সেল। কর্মকর্তারা জানান, ইভ্যালির হিসাব সম্পর্ক বিষয়ে অন্যান্য খাত থেকে প্রাপ্ত তথ্যও মিলিয়ে দেখা হবে। উল্লেখ্য, আদালত কর্তৃক নিযুক্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ইভ্যালির অ্যাকাউন্টে ৪ হাজার ৮৬৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা জমার বিষয়ে তথ্য দিয়েছিল। এ অর্থ শুধু মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে। এ টাকার কোনো হিসাব ইভ্যালির কর্মকর্তারা দিতে পারেননি বলে ওই সময় শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক জানিয়েছিলেন।