ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন একই বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নিকট অভিযোগপত্র দায়ের করেছেন তিনি।
প্রক্টরের নিকট অভিযোগপত্রে ওই নারী লিখেছেন, অধ্যাপক নাদির জুনাইদ কর্তৃক যৌন হয়রানির কারণে বিগত দেড় বছর প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেছেন তিনি। একপর্যায়ে ঘুমের ওষুধ নিতে হয়েছে তার। গত বছরের শুরুতে কাউন্সিলিংও করেছেন তিনি। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, অধ্যাপক নাদির জুনাইদ বিভিন্ন সময়ে কথাবার্তায় তাকে যৌন ইঙ্গিত দিতেন এবং প্ররোচিত করতে চেষ্টা করতেন। যৌন প্ররোচনায় সাড়া না দিলে শিক্ষার্থীকে ‘অনুভূতিহীন’, ‘নির্বোধ’, ‘ডাক্তার দেখানো উচিত’ প্রভৃতি মন্তব্য করতেন।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, অধ্যাপক নাদির জুনাইদ বিয়ের প্রসঙ্গে কথা বলেন এবং স্পষ্টভাবে আমার দিকে ইঙ্গিত করেন। আমি খুব অবাক হই এবং খুব অস্বস্তিতে পড়ি। তবে, আমি কৌশলে তাকে নাকচ করে দিই।
তিনি আরও জানান, নাদির জুনাইদ ঘন ঘন দেখা করতে বলতেন এবং তার বাসায় আমন্ত্রণ জানাতেন। আমি প্রতিবারই বিভিন্ন অযুহাতে নাকচ করতাম। অধ্যাপক নাদির জুনাইদের ‘ব্যক্তি-আক্রোশের’ শিকার হওয়ার ভয়ে গত দেড় বছর যাবৎ মুখ বুজে সব সহ্য করেছি।
অধ্যাপক নাদির জুনাইদ অনান্য নারী শিক্ষার্থীর শরীরের অবয়ব নিয়ে নোংরা মন্তব্য করতেন উল্লেখ করে ওই শিক্ষার্থী অভিযোগপত্রে লিখেছেন, নাদির জুনাইদ পরিচয়ের শুরুতে উনার সুন্দর আচরণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ করেন।
আদর্শের ভেক ধরে থাকেন। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে নারী শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আমার সাথে কথোপকথনের সময়ও উনি বিভিন্ন নারী শিক্ষার্থীদের নাম উল্লেখ করতেন। এমনকি বিভিন্ন সময় তাদের শারীরিক অবয়ব নিয়েও নোংরা মন্তব্য করেছেন। আমার মত অনেক শিক্ষার্থীকেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন বিভিন্ন সময় জানতে পেরেছি।
সাংবাদিকতা বিভাগের এই অধ্যাপক বিভাগে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী উল্লেখ করেছেন, আমরা নিজ বিভাগে ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠছি, নিজেদের মধ্যে সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ করছি। একজন শিক্ষকের কাছে সবাই কোণঠাসা হয়ে পড়লাম। যেখানে উনি উনার মতো একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন, আর সামনে করতে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, অভিযোগপত্রটি হাতে এসেছে। এটি উপাচার্যের স্যারের অফিসে রাখা হয়েছে। উপাচার্য স্যার টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছেন। স্যার ঢাকায় ফেরার পর তার কাছে অভিযোগ পত্রটি জমা দেয়া হবে। উপাচার্য স্যারই এবিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।