লাখ লাখ আমেরিকানদের অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলোর সাথে চীনা হ্যাকিং চক্রান্তের যোগসাজোশ মিলেছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা । সাত চীনা নাগরিকের বিরুদ্ধে ব্যাপক সাইবার-আক্রমণ প্রচারণা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ১৪ বছর ধরে চলা একটি হ্যাকিং অপারেশনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত সাতজনের সম্পর্কে তথ্য দিতে পারলে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ।
বিচার বিভাগ বলেছে যে, হ্যাকাররা মার্কিন এবং চীনের বিদেশি সমালোচক, ব্যবসা এবং রাজনীতিবিদদের টার্গেট করেছে। সাতজন ব্যক্তি ১০,০০০ টিরও বেশি ‘ইমেইল’ পাঠিয়েছেন, যা একাধিক মহাদেশ জুড়ে হাজার হাজার অনলাইন অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীকে প্রভাবিত করেছে। এটিকে মার্কিন বিচার বিভাগ চীনের সরকার সমর্থিত একটি ‘বিশাল গ্লোবাল হ্যাকিং অপারেশন’ বলে অভিহিত করেছে।
এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টোফার ওয়ে বলেছেন, আজকের ঘোষণাটি আমাদের দেশের সাইবার নিরাপত্তা, আমেরিকানদের লক্ষ্যবস্তু এবং আমাদের উদ্ভাবনকে দুর্বল করার জন্য চীনের ক্রমাগত এবং বেপরোয়া প্রচেষ্টাকে প্রকাশ করে।
তিনি যোগ করেছেন , যতক্ষণ চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের অংশীদারদের লক্ষ্যবস্তু করে চলেছে, ততক্ষণ এফবিআই একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠাতে থাকবে যে সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি সহ্য করা হবে না। যারা আমাদের দেশের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধিকে হুমকির মুখে ফেলে তাদের আমরা অক্লান্তভাবে অনুসরণ করব।
লন্ডনে চীনা দূতাবাসের কূটনীতিকরা বলেছেন যে, তারা এই অভিযোগগুলোর ‘ঘোর বিরোধিতা’ করছেন। এই অভিযোগগুলোকে ‘সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং বিদ্বেষপূর্ণ অপবাদ’ বলে অভিহিত করেছেন তারা । নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড মোতাবেক , নিউজিল্যান্ডের সরকারও বলেছে যে, তার সংসদকে চীন-সমর্থিত হ্যাকাররা লক্ষ্যবস্তু করেছে । ওয়াশিংটন ডিসিতে চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যথাযথ প্রমাণ ছাড়াই, প্রাসঙ্গিক দেশগুলো একটি অযৌক্তিক উপসংহারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে’ এবং ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছে’।
সাত চীনা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রেক্ষিতে, মার্কিন প্রসিকিউটররা বলেছেন, হ্যাকিংয়ের ফলে কাজের অ্যাকাউন্ট, ব্যক্তিগত ইমেইল, অনলাইন স্টোরেজ এবং টেলিফোন কল রেকর্ড সম্ভাব্যভাবে হ্যাকারদের কাছে গেছে । লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করার আগে তাদের পাঠানো ইমেইলগুলোতে লুকানো ট্র্যাকিং লিঙ্ক রয়েছে। যদি একজন ব্যক্তি তাদের পাঠানো ইমেইলটি খুলেন, তাহলে তাদের তথ্য – তাদের অবস্থান এবং আইপি একটি সার্ভারে চলে যাবে যা অভিযুক্ত সাতজন আসামি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
মার্কিন প্রসিকিউটররা বলছেন, হ্যাকাররা প্রাপকের হোম রাউটার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসকেও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছেন।
সেইসাথে হোয়াইট হাউস এবং মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে কর্মরত মার্কিন সরকারী কর্মকর্তাদের এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের স্ত্রীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। বিচার বিভাগ জানিয়েছে , অভিযুক্তরা সফলভাবে হংকং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিদেশে অবস্থিত তাদের সহযোগীদের সাথে ম্যালওয়্যার ভাগ করে নিয়েছে । মার্কিন সংস্থাগুলোকেও হ্যাক করা হয়েছিল। অভিযুক্তরা প্রতিরক্ষা, তথ্য প্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ, উৎপাদন ও বাণিজ্য, অর্থ, পরামর্শ বিভাগ , আইনি এবং গবেষণা বিভাগকে লক্ষ্য করেছে বলে অভিযোগ।
বিচার বিভাগ বলেছে, যে কোম্পানিগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে ডিফেন্স কন্সট্রাক্টর। এরা মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ৫ জি নেটওয়ার্ক সরঞ্জামসহ একাধিক সামরিক পরিষেবা প্রদান করে।
সূত্র : বিবিসি