বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা সহমর্মিতা জানান। কোনো কোনো স্থানে রাস্তায় মিছিল-সমাবেশও করেন। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি পড়ুয়া এবং শিক্ষকরা এক সমাবেশে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা জানান। ১৯শে জুলাইয়ের ওই সমাবেশে উল্লেখযোগ্য ছাত্র এবং শিক্ষক একাত্মতা ঘোষণা করেন। তারা মালয়েশিয়ান নাগরিক এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতাও কামনা করেন।
এই যখন অবস্থা তখন কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন ছাত্র-শিক্ষকদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে কাজাং থানায় রিপোর্ট করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা নানামুখি হেনস্তার শিকার হন। এই মামলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর। শুধু তাই নয়, খোরশেদ আলম খাস্তগীর দেশের আন্দোলনকারীদেরও ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পররাষ্ট্র ক্যাডারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএসএ) হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ফাঁস হওয়া চ্যাটে দেখা যায় খোরশেদ আলম খাস্তগীর মালয়েশিয়া প্রবাসী যারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলেন তাদের পাসপোর্ট বাতিলের সুপারিশ করেছিলেন!
ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে আর পতিত স্বৈরশাসনের পক্ষে নগ্নভাবে অবস্থানগ্রহণকারী সেই খাস্তগীরকে পোল্যান্ডে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্র-জনতার রক্তের উত্তরাধিকার বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিতর্কিত ওই কূটনীতিককে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পদায়নের ঘোষণায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের মধ্যে। তার নিয়োগ বাতিলের দাবি উঠেছে। স্মরণ করা যায়, বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে খোরশেদ আলম খাস্তগীরকে বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছিলো। কিন্তু তার অতীত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে মানামা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। পরবর্তীতে ওয়ারশোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে প্রস্তাব করে বিদায়ী সরকার, যা বহাল রাখে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার!
মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর বিসিএস (ফরেন অ্যাফেয়ার্স) ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের একজন কূটনীতিক। তিনি ২০০১ সালে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইউরোপ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক সংস্থা অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে প্রথম সচিব ও ওমানের মাস্কাটে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাউন্সেলর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।