যশোরের মণিরামপুরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী আকস্মিক চুলকানিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) এ ঘটনা ঘটে মণিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই ঘটনা শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আক্রান্তদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জানান, মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়ের সমাবেশ শেষে ক্লাস শুরু হলে ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল প্রিয়ার শরীরে হঠাৎ চুলকানি শুরু হয়। তার শরীরে চুলকানোর ফলে র্যাশ দেখা দেয়। প্রিয়া যখন চুলকাচ্ছিলেন, তার সহপাঠী জীম এগিয়ে গিয়ে তাকে দেখার পর তারও একই উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর একে একে অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যেও একই সমস্যা দেখা দেয়। পরে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে আরও শতাধিক শিক্ষার্থী একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসে।
এ সময় শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. জেসমিন সুমাইয়া জানান, আক্রান্ত সকল শিক্ষার্থী একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন, এবং তিনি এটিকে ‘অ্যানাফিল্যাকটিক’ প্রতিক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে, একই সময় এত শিক্ষার্থী এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়াটা অস্বাভাবিক মনে করছেন তিনি। এজন্য তিনি বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত ও গবেষণার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম হালদার জানান, প্রথমে জান্নাতুল প্রিয়া আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর একে একে অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত হলে, প্রথম ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আলাদা করা হয়।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের এক অভিভাবক, দেবাশীষ দেবনাথ বলেন, তার ছেলে দিপ্র সুস্থ অবস্থায় বিদ্যালয়ে গিয়েছিল, কিন্তু স্কুলে যাওয়ার পর সে এই রোগে আক্রান্ত হয়। তিনি এ ঘটনার কারণ জানার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না জানান, তিনি ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন এবং স্কুলের মাঠে গরুবাহী নছিমন, আলমসাধুসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন দেখতে পান। ধারণা করা হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা এসব যানবাহনের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হতে পারে। তিনি দ্রুত ওই যানবাহনগুলো স্কুলের মাঠে না রাখার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. হুমায়ুন কবীর, সহকারী শিক্ষা অফিসার কামরুল বাশার উমর ফারুক এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম হালদার।
এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় তদন্ত চলছে এবং এর সঠিক কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।