দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশের শেয়ারাবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। ভোটের পর লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই সূচকের বড় উত্থান হয়েছেভ একই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের গতি।
এমন ইতিবাচক বাজারে বেড়েছে বাজার মূলধন। ভোটের পর গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে লেনদেন বেড়েছে ৩৭ শতাংশের বেশি। আর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ৫৭ পয়েন্টের বেশি।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছে। তবে এই ভোটের আগে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দেয়। এতে আতঙ্কে অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকেন। ফলে একদিকে লেনদেনের গতি কমে যায়, অন্যদিকে দরপতন স্বাভাবিক হয়ে উঠে শেয়ারবাজারে।
তবে বড় ধরনের কোনো সংঘাত ছাড়াই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা এরই মধ্যে শপথ গ্রহণ করেছেন। সরকারের মন্ত্রিসভাও গঠিত হয়েছে। স্বাভাবিক পরিবেশে ভোট এবং নতুন সরকার গঠিত হওয়ায় শেয়ারবাজারেও যেনে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে ভোটের পরের সপ্তাহজুড়েই দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান।
এতে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৪৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩টির। আর ২০০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম অপরিবর্তিত থাকা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। তবে ভোটের পর বাজারে কিছুটা গতি বাড়ায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইসের ওপরে উঠে এসেছে।
দাম কমার তুলনায় চারগুণ বেশি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় থাকায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৬ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৮১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৫ হাজার ১১০ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ।
ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫৭ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বা এক দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি শূন্য দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বাড়ে।
এছাড়া ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ১৩ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে এক দশমিক ৩২ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ।
সবকয়টি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৪৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩৯৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৫০ কোটি ১৫ লাখ টাকা বা ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১৯৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় এক হাজার ৫৯৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৬০০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বা ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯০ কোটি ৫৭ লাখ টাকার, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ৬৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- রূপালী ব্যাংক, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মিডল্যান্ড ব্যাংক, অলিম্পিক এক্সেসরিজ ও দেশবন্ধু পলিমার।