সর্বশেষ
[glt-translator]
Home » অর্থনীতি » ফের বাড়তে শুরু করেছে গরুর মাংসের দাম

ফের বাড়তে শুরু করেছে গরুর মাংসের দাম

ফের বাড়তে শুরু করেছে গরুর মাংসের দাম। এখন বাজারে গরুর মাংস কেজি ৭০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নির্বাচনের আগে হঠাৎ গরুর মাংসের দাম কিছুটা কমায় বাজারে হইচই শুরু হয়। তখন ৫৮০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছিল। বিক্রেতারা বড় সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দর উল্লেখ করে গরুর মাংস বিক্রি করেছিলেন। এমনকি মাইকিংও করা হয়েছিল। তবে নির্বাচন যেতেই বদলে গেছে সেই চিত্র।
কসাই ও মাংস বিক্রেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে বাজারে গরু দাম কম ছিল। বর্তমানে গরুর দাম বেশি। তাই আগের মূল্যে মাংস বিক্রি করা যাচ্ছে না। আর ক্রেতারা বলছেন, ভোটের জন্য মাংসের দাম কমানো হয়েছে।
ভোট শেষ এখন বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভোটের পর থেকেই গরুর মাংসের দাম বাড়তে থাকায় অস্বস্তি তৈরি হয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে। নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের পরে এক কেজি গরুর মাংসের দামে পার্থক্য দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। নির্বাচনের আগে যেখানে কোনো কোনো ব্যবসায়ী এক কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকা কিংবা আরও কমে বিক্রি করেছিল সেখানে এখন ৭০০ টাকার নিচে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে না। কোথাও কোথাও বিক্রি করা হচ্ছে ৭৫০ টাকা। দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কসাই ও মাংস বিক্রেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের পর বাজারে গরুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। একটি গরুতে আগের চেয়ে অন্তত ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়।
ঢাকার সবুজবাগ থানাধীন কদমতলা ওয়াসা রোডের মায়ের দোয়া গোস্ত বিতানে শুক্রবার ৭০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছিল। কসাই সোহরাব বলেন, আগে যে গরু কিনতাম ১ লাখ ৬০ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায়, এখন ওই গরু ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় কিনতে হয়। প্রত্যেক গরুতে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি নিচ্ছে। বাজারে এখন গরু কম ছাড়ছে। তাই দামও বেড়ে গেছে। ওই দোকানে মাংস কিনতে আসা ক্রেতা সাত্তার জানান, কিছুদিন আগেও ৬৫০ টাকায় মাংস কিনেছি। এখন দাম বেড়ে গেছে। নির্বাচনের জন্য তখন দাম কমিয়েছিল। নইলে নির্বাচন যেতেই কেন বাড়িয়ে দেয়া হবে।
কোরবানির জন্য ফার্মগুলো গরু ধরে রেখেছে, এতে বাজারে গরুর সরবরাহ কম বলে জানিয়েছেন বাসাবো বাজারের আলী ভাই গোস্ত বিতানের কসাই লোকমান। তিনি বলেন, বাজারে এখন গরু কম ওঠে। তাই দাম বেশি। যখন গরুর দাম কম ছিল তখন আমরাও কম দামে বিক্রি করেছি। বাজারের আরেক মাংস ব্যবসায়ী বলেন, দাম বাড়ার জন্য নির্বাচনের কারণ থাকতে পারে। নইলে নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে মাংসের দাম এত কমে যাইতো না। এখন নির্বাচন শেষ তাই আগের দামে যাচ্ছে মাংস।
দাম বৃদ্ধির কারণে এখন গরুর মাংস বিক্রিও কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভোটের আগে দাম কমের সময় নিম্নআয়ের মানুষও চেষ্টা করেছেন সপ্তাহে এক কেজি গরুর মাংস কিনতে। কিন্তু দাম বাড়ার পর থেকে ফের গরুর মাংস কেনা বাদ দিয়েছেন তারা। কসাই লোকমান বলেন, দাম বাড়ার পর আমাদের বেচাকেনাও অর্ধেক কমেছে। যেখানে আগে ৭ থেকে ৮টা গরু বিক্রি করতাম। এখন তার অর্ধেক বিক্রি হয়। এখন সব ধরনের মানুষ মাংস কিনতেও আসছে না। হোটেল ব্যবসায়ীরাও পরিমাণে কম করে কিনছে। শহিদুল্লাহ নামের এক ক্রেতা এক কেজি গরুর মাংস কিনেছেন। তবে মাংসের দাম ৭০০ টাকা শুনে তিনি অবাক হয়েছেন। বলেন, কিছুদিন আগেও নিলাম ৬৫০ টাকা। এরমধ্যেই দাম বেড়ে গেল। মো. বিল্লাল হোটেলের জন্য প্রতিদিন গরুর মাংস ক্রয় করেন। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনের আগেই শুনছিলাম নির্বাচনের পর গরুর মাংসের দাম বাড়বে। এখন তাই হলো। কোরবানি ছাড়া বাসার জন্য এক কেজি গরুর মাংসও কিনে খেতে পারি না।
তবে নির্বাচনের পর মাংসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে পাল্টাপাল্টি কারসাজির অভিযোগ এনেছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসেশিয়েশন ও বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি। এই মুহূর্ত মাংসের দাম নতুন করে বাড়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসেশিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমাদের গো খাদ্যের দাম দু’মাস আগে যা ছিল এখনো তাই আছে; বরং কিছু কিছু জিনিসে দু-একটা কমছে। খামারিরাও যে গরু বিক্রি করছে তারাও বাড়তি দাম পাচ্ছে না। আগের দামেই গরু বিক্রি করছে। গরুও পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। কিন্তু এখন গরুর বেপারী আর মাংস ব্যবসায়ীরা মিলে কারসাজি করার চেষ্টা করছে। তাছাড়া এখন গরুর মাংসের দাম বাড়ার কথা না।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসেশিয়েশনের দিকে পাল্টা অভিযোগ করে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম মানবজমিনকে বলেন, সরকারিভাবে মাংসের মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম যাতে সরকারের পক্ষ থেকে মাংসের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হোক। যখন মাংসের দাম কমছিল তখন ৬৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করলো ফার্মারস এসেশিয়েশন। কারণ মাংসের দাম কমলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তখন তাদের স্টকে অনেক গরু ছিল। দাম কমার সময় তারা ষড়যন্ত্র করে দাম বাড়িয়ে নির্ধারণ করলো।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময়ে বাংলাদেশের বর্ডারগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া কিছু গরু আসা বন্ধ হয়ে যায়। আর বাজার খারাপ থাকার কারণে যারা গরুর ফার্মের মালিক কোরবানির জন্য বাজার থেকে অনেক গরু কিনে নিয়েছে। এসব ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি আমরা।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসেশিয়েশনের মহাসচিব আরও বলেন, আমরা ৪৫ বছর মাংসের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। সর্বশেষ মাংসের মূল্য নির্ধারণ করেছি ২০১৭ সালে ৩২০ টাকা। তারপর যখন মাংসের মূল্য নির্ধারণ করা বন্ধ হয়ে গেল তারপর থেকে ২০১৮ সালে ৫০০ টাকা মাংসের দাম হলো। ২০২৩ সালে ৮০০ টাকা হয়। এই অস্বাভাবিক দামের কারণে দেশের অনেক মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদি সরকার উদ্যোগ নিয়ে একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিতো এবং ভোক্তা অধিকার মূল্য বাস্তবায়ন করতো তাহলে এখনো আমি মনে করি গরুর মাংস ৫০০ টাকা হওয়া উচিত।
কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, এখন দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। নির্বাচনের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেই তাদের কথা অনুযায়ীই দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। তারচেয়ে কিছু কমেও অনেকে বিক্রি করেছিল। তখন সবার আলোচনায় ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এখন তদারকি হচ্ছে না। এটার সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ করে দেশে কোনো গরুর সংকটও হয় নাই। এই দাম কমার কথা। বড় ব্যবসায়ীরা এটা নিয়ে কারসাজি করছে। বেপারীরাও গরুর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচিত বাজারে গিয়ে তদারকি করা। ব্যবসায়ীরা অতি লোভের কারণে দাম বাড়াচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *