তীব্র গ্যাস সংকটে হুমকির মুখে নারায়ণগঞ্জের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পকারখানা। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানার মালিকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সিএনজি স্টেশনগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইন ধরেও গ্যাস পাচ্ছে না যানবাহন চালকরা। গ্যাস সংকটের ভয়াবহতায় জরুরি সভা করেছেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ। শনিবার রাতে শহরের চাষাড়ায় বিকেএমইএ’র প্রধান কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, নির্বাচনের পর থেকেই গ্যাস না পাওয়ার কারণে সময়মতো পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না। ফলে এয়ার শিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে। এতে খরচ দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে গার্মেন্ট মালিকদের। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিকেএমইএর সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। বিকেএমইএ’র তথ্যমতে, গত ১৬ই অক্টোবর থেকে গ্যাসের কোনো প্রবাহ নেই। গ্যাসের প্রেসার জিরো পিএসআই থাকায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে গ্যাসনির্ভর কারখানাগুলোতে।
এমন দৃশ্য নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্প নগরী, ফতুল্লার কাঠের পোল, জালকুড়ি, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও আড়াইহাজার শিল্প এলাকাগুলোতে। গ্যাস সংকটের কারণে বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত পোশাক শিল্প মালিকরা বেশ কিছুদিন ধরে সংগঠনের প্রধানের কাছে অভিযোগ জানিয়ে আসছেন।
কারখানার মালিকরা বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ, কাপড় ডায়িং করা যাচ্ছে না, সময়মতো পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না। তার ফলে উৎপাদন খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি এয়ার শিপমেন্ট করার কারণে হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পারছেন না বলে জানান তারা। বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, ‘বহুবার চেষ্টা করার পরেও গ্যাস সংকট নিরসন করা যায়নি। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক বিপদগ্রস্ত হয়েছে। শ্রমিকদের ডিসেম্বর মাসের বেতন দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু রপ্তানি করা যায়নি, যথাসময়ে পোশাক তৈরি করা যায়নি। এখন আবার জানুয়ারি মাসের বেতন দেয়ার সময় চলে এসেছে। এখন ডিসেম্বরের বেতন দেয়া হবে। গ্যাস সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো অচল।’
তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস থাকবে, এমন আশ্বাসে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। তারপরেও গ্যাস না পাওয়ার কারণে সবাই হতাশ। বারবার যোগাযোগ করার পরেও নির্বাচনের আগে ১০ থেকে ১২ দিন গ্যাস থাকলেও নির্বাচনের ৭ দিন আগে গ্যাসের প্রেসার শূন্যতে নেমে আসে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। সেলিম ওসমান বলেন, রেশনিকভাবে নারায়ণগঞ্জে গ্যাস দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হচ্ছে না। অতি দ্রুত গ্যাস সংকট নিরসন করে নীট শিল্পের উন্নয়ন করার জন্য এখনই সময়, তা না হলে করোনার থেকে ২০০০ গুণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
তিনি বলেন, ‘এই জরুরি সভা থেকে সম্মিলিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করা হবে। এই সমস্যা থেকে উদ্ধার করে খুব দ্রুত সময়ে নারায়ণগঞ্জের শিল্প অঞ্চলগুলোতে গ্যাস যেন দেয়া হয়, তার জন্য সর্বোচ্চ মহলে আবেদন করা হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাস যদি পাওয়া যায় ভালো, অন্যথায় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় থাকবে না। সে ক্ষেত্রে আমরা দায়ী হবো না। যদি দাম দিয়ে গ্যাস না পাওয়া যায়, তাহলে কীভাবে শ্রমিকের বেতন বহন করা যায়। এ নিটওয়্যার শিল্প থেকে প্রতি মাসে বাংলাদেশে আড়াই হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে এই নিটওয়্যার শিল্প। এর মাধ্যমে ফরেন কারেন্সি, অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়, যা রিজার্ভের বড় একটি অংশ।’ এদিকে, গ্যাস সরবরাহ না থাকায় দুরবস্থা পার করছে যানবাহন চালকরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে থেকেও প্রয়োজনমতো গ্যাস পাচ্ছেন না তারা। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন সিএনজি স্টেশন মালিকরা।