আভদিভকা থেকে অন্তত এক হাজার ইউক্রেনীয় সেনাকে বন্দি করেছে রুশ বাহিনী। মঙ্গলবার এক রিপোর্টে এ তথ্য দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস । ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে গণমাধ্যমটি। এতে বলা হয়েছে, প্রাণ বাঁচাতে নিজেদের হাজারো সহযোদ্ধাদের পেছনে ফেলেই পালিয়ে গেছে ইউক্রেনীয় সেনারা।
কৌশলগত দিক বিবেচনায় দনবাস অঞ্চলের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর একটি এই আভদিভকা। দীর্ঘ এক দশক ধরে এই শহরটিকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিল ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো। এই শহর থেকে ইউক্রেনের সেনা প্রত্যাহারকে ‘বিশৃঙ্খলাপূর্ণ’ বলে আখ্যায়িত করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। গণমাধ্যমটি লিখেছে, আভদিভকায় ইউক্রেনের যে বিপর্যয়কর ক্ষতি হয়েছে তা দেশটির সেনাদের ‘ইতিমধ্যে দুর্বল হয়ে পড়া মনোবলকে আরও দুর্বল করবে’।
আভদিভকা বাঁচাতে তাড়াহুড়া করে সেনা প্রধান পরিবর্তন করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গত শুক্রবার ইউক্রেনের নতুন সেনা প্রধান জেনারেল আলেকসান্দ্র সিরস্কি আভদিভকা থেকে সেনাদের সরে আসার নির্দেশ দেন। ওইদিনই শহরটি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ঘোষণা দেয় মস্কো। কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহরটি দনেতস্কের রাজধানী থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এই শহর থেকে গত এক দশক ধরে দনেতস্ক সিটিতে হামলা চালিয়ে আসছিল ইউক্রেন।
মঙ্গলবার ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর দুই সূত্রের বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, আভদিভকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে ৮৫০ থেকে এক হাজার সেনা নিখোঁজ রয়েছে। পশ্চিমা কর্মকর্তারাও এই সংখ্যাটিকে সঠিক বলে নিশ্চিত করেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শত শত সেনার এভাবে রাশিয়ার হাতে ধরা পড়াকে ইউক্রেনের জন্য বড় ক্ষতি হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ব্যাপক সেনা সংকটে ভুগছে বলে জানিয়েছে গণমাধ্যমটি। গত গ্রীষ্মে ইউক্রেনের ব্যর্থ কাউন্টার অফেন্সিভের কারণে সেনাবাহিনীতে নতুন সদস্য যুক্ত করাও কঠিন হয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউক্রেনীয় সেনা জানান, আভদিভকা থেকে সেনা প্রত্যাহারে কোনো ভালো পরিকল্পনা ছিল না। এ কারনেই এত বেশি ইউক্রেনীয় ধরা পড়েছে। রাশিয়া শেষ সপ্তাহে যে গতিতে আভদিভকা দখল করেছে তার জন্য ইউক্রেন প্রস্তুত ছিল না। রাশিয়ার অগ্রগতি ধীর করতে এলিট ইউনিট মোতায়েন করা হলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। গত শনিবার ইউক্রেনের কম্যান্ডার আলেকসান্দ্র তারানাভস্কি স্বীকার করেন যে, ‘কিছু ইউক্রেনীয় সেনা রুশদের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে’। তবে তিনি এর সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে কোনো ধারণা দেননি।
আভদিভকা দখলের খবর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দেয়ার সময় রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শইগুলো বলেন, এই শহরটি দখলে ‘সামান্য’ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রুশ সেনাদের। তখন তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আভদিভকা থেকে ব্যাপক অস্ত্রশস্ত্রসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আহত ইউক্রেনীয় সেনাকে বন্দি করা হয়েছে।