রমজানে রাজধানীতে তীব্র যানজটে ভোগান্তির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রমজান শুরুর আগের দিন গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। উত্তরা, বনানী, মহাখালী, জাহাঙ্গীর গেট, বিজয় সরণি মোড়, ফার্মগেট, ধানমণ্ডি, সাইন্সল্যাব, শাহবাগ, কাওরান বাজার, বাংলামোটর, মৎস্যভবন, পল্টন, মোহম্মদপুর, পান্থপথসহ বিভিন্ন সড়কে গতকাল সকাল থেকে ছিল যানবাহনের বিশাল চাপ। অফিসগামী যাত্রী ছাড়াও বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীদের দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে দেখা গেছে। কেউ আবার বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। ধানমণ্ডির সিটি কলেজের সামনে থেকে জিগাতলা পর্যন্ত যানজটে স্থবির হয়ে ছিল যানবাহনগুলো। একেতো গরম এরপর যানজটে হাঁসফাঁস অবস্থা দেখা গেছে মানুষের। স্কুল নিয়ে সন্তানকে নিয়ে ফিরছিলেন নাসরিন আক্তার। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে।
মোহম্মদপুর থেকে জিগাতলা আসতে সাধারণত ১০ থেকে ২০ মিনিটের বেশি সময় লাগে না। কিন্তু এক ঘণ্টার বেশি বাসে বসেছিলাম। কোনোভাবেই বাস আগাতে পারে না। শুধু গাড়ি আর রিকশা। তাই বাধ্য হয়ে হেঁটে যাচ্ছি। গরমে বাচ্চার কষ্ট হচ্ছে তারপরও স্কুলের দেরি হয়ে যাবে তাই নেমে পড়লাম। বেসরকারি ব্যাংকে চাকরিরত রাজিউর রহমান রুমি তার অফিস তাঁতীবাজার যাওয়ার উদ্দেশ্যে ধানমণ্ডি ১৯ নম্বর স্টার কাবাব থেকে রওনা করেন সকাল ৮টায়। সাড়ে ৯টায় তিনি সাইন্সল্যাবে পৌঁছাতে পারেননি।
সিটি কলেজ এলাকায় রুমি বলেন, ঢাকায় এমতিতেই যানজট থাকে। কিন্তু এই কয়েকদিন এর মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, অন্য দিন ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আমি অফিসে পৌঁছে যাই। কিন্তু আজ দেড় ঘণ্টাও ধানমণ্ডি এলাকা পার হতে পারিনি। ফার্মগেট থেকে রিকশায় চেপে নিউমার্কেট যাচ্ছিলেন শান্তা ইসলাম। কিন্তু তীব্র যানজটে তিনিও আর রিকশায় বসে থাকতে পারেননি। শান্তা বলেন, ফার্মগেট থেকে গ্রীন রোড হয়ে নিউমার্কেট কয়েক মিনিটের পথ। যানজটের ভয়ে লেগুনায় না উঠে রিকশা নিলাম। অনেক কষ্টে পান্থপথ সিগন্যাল পার হওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ রিকশায় বসে আছি।
রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কে সরজমিন দেখা যায়, বিমানবন্দর থেকে শেওড়া ওভার ব্রিজ পর্যন্ত যান চলাচল স্থবির অবস্থায়। শেওড়া থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কে ধীরগতিতে যান চলাচল করছিল। ধীরগতিতে যানচলাচলের কারণে মহাখালী পার হয়ে জাহাঙ্গীর গেট এলাকা পর্যন্ত সৃষ্টি হয়েছে যানজট। এদিকে, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডা পার হয়ে রামপুরা পর্যন্ত সড়কেও ছিল যানজট ও গাড়ির চাপ। রাজধানীর ভাটারা থেকে বনশ্রী এলাকায় অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন ইস্তিয়াক আহমেদ। তিনি বলেন, নতুন বাজারে এসে দেখি রাস্তা একদম বন্ধ। এ পরিস্থিতি দেখে বাসে না উঠে হেঁটে রওনা হয়ে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত আসি। পরে উত্তর বাড্ডা থেকে একটি রিকশা নিয়ে বনশ্রী পর্যন্ত আসি। রাজধানীর অন্যসব এলাকার মতো প্রগতি সরণি এলাকায়ও গতকাল সকাল থেকে ছিল প্রচুর গাড়ির চাপ। এদিকে ধানমণ্ডি ২৭ হয়ে মিরপুর রোড, নিউমার্কেট, আজিমপুর, মগবাজার, সোনারগাঁও, এলিফ্যান্ট রোড এলাকাতেও তীব্র যানজট চোখে পড়ে। কারওরান বাজার এলাকায়ও যানজট দেখা যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্র্যাফিক বিভাগ বলছে, রাজধানীর বিমানবন্দর, কুড়িল, বনানী, বাড্ডা, মহাখালী, হাতিরঝিল, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী ও কালশী এলাকাতেও নিয়মিত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সকালের পর থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে এসব রাস্তায় গাড়ির চাপও বাড়তে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা চলছে সাতরাস্তা থেকে মহাখালী হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে।
ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন বলেন, রমজান এলে ঢাকা শহরে যানজট বেড়ে যায়। সড়কের উভয় পাশে অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাথ দখল এবং যত্রতত্র গাড়ি চলাচলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ট্র্যাফিক পুলিশসহ থানা পুলিশ সদস্যরা যানজট নিরসনে বাড়তি ডিউটি করছেন। কিন্তু ঢাকা শহরের যানজট নিরসন পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সড়কে চলাচলকারী সবার এ বিষয়ে সহযোগিতা প্রয়োজন।
এদিকে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, পবিত্র রমজান মাসে পুলিশের বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ। যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ কাজ করছে। তিনি বলেন, ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীর সচেতনতা ও সহযোগিতা দরকার। যারা গাড়ি ব্যবহার করছেন, যারা গাড়িতে চড়ছেন এবং যারা রাস্তার আশপাশে ব্যবসা করছেন, তাদের সহযোগিতা দরকার। তা না হলে সোয়া ২ কোটি লোক বসবাস করে, সেখানে পুলিশ রাতারাতি ট্র্যাফিক সমস্যা সমাধান করে দিতে পারবে না। তবে আমরা আশাবাদী সকলে যদি সহযোগিতা করেন, তাহলে ট্র্যাফিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। আর পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয়ভাবে ট্র্যাফিক সমস্যা সমাধান করতে পারেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাস্তায় যারা সংস্কারকাজ করেন ওয়াসা, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অন্যান্য সংস্থা যে উন্নয়নকাজ করে থাকে, তারা রমজান মাসে সকলের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে এসব কাজ বন্ধ রাখবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা। এসব কাজ বন্ধ রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে চিঠি দিয়ে জানাবো।