চলতি এশিয়া কাপে সুপার ফোরে দুর্দান্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেটে হারায় তারা। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে লিটন কুমার দাসের দলের প্রতিপক্ষ ভারত। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে আজ রাত সাড়ে ৮টায়। টি-টোয়েন্টিতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় সব দলের জন্য ভারত এক আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। চলতি এশিয়া কাপেও এখন পর্যন্ত সব ম্যাচেই প্রতিপক্ষদের স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর দলটি। তবে বাংলাদেশের হেড কোচ ফিল সিমন্স বিশ্বাস করেন ভারতকে হারানোর সামর্থ্য আছে তার দলের। তবে মাঠে নামার আগে সবার মধ্যে ভারতকে হারানোর বিশ্বাস রাখতে হবে।
এবারের এশিয়া কাপে যাওয়ার আগে টানা ৩ সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। তবে এশিয়া কাপে দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে যাওয়ায় সুপার ফোরে ওঠা নিয়েই শঙ্কা জাগে। তবে সব শঙ্কা দূর করে সুপার ফোরে উঠেই লঙ্কানদের হারিয়েই প্রতিশোধ তুলে নেয় টাইগাররা। এতে করে ফাইনাল খেলার আশাও তৈরি হয়েছে। তবে ফাইনালে উঠতে গেলে আজই সবচেয়ে বড় পরীক্ষা দিতে হবে লিটন-সাইফদের। শক্তিমত্তায় অনেক এগিয়ে থাকা ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে সবার মধ্যে জয়ের বিশ্বাস ছড়িয়ে দিতে চান কোচ ফিল সিমন্স। 

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সিমন্স বলেন, ‘সব দলেরই ভারতকে হারানোর সক্ষমতা আছে। খেলাটা হয় একটা নির্দিষ্ট দিনে। ভারত আগে কী করেছে, সেটা তখন কোনো কাজে আসে না। ম্যাচের দিন, ওই সাড়ে তিন ঘণ্টায় কী হলো সেটাই আসল। আমরা আমাদের সেরাটা খেলবো, ভারতের ভুলের অপেক্ষায় থাকবো। এভাবেই ম্যাচ জেতা যায়।’ জয়ের জন্য কি করতে হবে সেটাও শিষ্যদের বলে দিয়েছেন সিমন্স, ‘হারানোর বিশ্বাস থাকতে হবে। আত্মবিশ্বাস আছে আমাদের। যদি সুযোগ আসে, কাজে লাগাতে হবে। সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেই ভারতের বিপক্ষে জেতা সম্ভব।’ রেকর্ডে ভারত অনেক এগিয়ে। শক্তিতেও তাদের নাগাল পাওয়া কঠিন। দুই দলের ১৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে শুধু একটিই। তবু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে আলাদা হাইপ তৈরি হয়। বাংলাদেশও সর্বোচ্চ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এ নিয়ে সিমন্স বলেন, ‘প্রতিটি ম্যাচেই উত্তেজনা থাকে। বিশেষ করে ভারতের ম্যাচে সবসময়ই উত্তেজনা থাকে কারণ তারা বিশ্বের এক নম্বর টি-টোয়েন্টি দল। স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজনা থাকবে। আমরা শুধু সেটার ওপর ভর করবো, মুহূর্তটা উপভোগ করবো এবং খেলাটা উপভোগ করবো। আমরা এভাবেই ম্যাচে নামতে চাই- খেলাটা উপভোগ করতে, আর তখনই আমরা সেরাটা দিতে পারবো।’ তবে এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের পরও নির্লিপ্ত থাকার প্রশ্নে যে উত্তর দিয়েছেন সিমন্স তাতে সমর্থকদের খুশি হওয়ার কথা। তিনি বলেন, ‘আমি এমন একজন, যে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমরা শুধু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ জিততে আসিনি। আমরা এসেছি চ্যাম্পিয়ন হতে। বাদ পড়লে বা চ্যাম্পিয়ন হলে তখনই আবেগ দেখা যাবে। তবে এখন আমার কাজ ড্রেসিংরুমে সবার পা মাটিতে রাখা।’ 

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের দুই নায়ক তাওহীদ হৃদয় ও সাইফ হাসান। একজন শুরু করেছেন, আরেকজন শেষ! সাইফ করেন ৬১ রান আর হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে ৫৮ রান। সাইফ এর আগের ম্যাচ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। আর টানা ১৫ ইনিংসে ফিফটি ছিল না হৃদয়ের ব্যাটে। স্ট্রাইকরেট নেমে গিয়েছিল একশোর কাছাকাছি। সবমিলিয়ে দু’জনের ব্যাটেই রান আসাটা স্বস্তির। রানে থাকা আর না থাকার মাঝে ফারাক যে অনেকটা এটা পরিষ্কার হৃদয়ের শরীরী ভাষায়। সিমন্স বলেন, ‘টুর্নামেন্ট বিষয়টাই এমন- কেউ ভালো শুরু করে আবার ফর্ম হারিয়ে ফেলে। কেউ আবার খারাপ শুরু করেও ভালো করতে পারে। আমি খুব আনন্দিত যে হৃদয় ভালো ব্যাটিং করছে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার মনে হয় কোনো খেলোয়াড় যদি ছন্দ হারিয়ে ফেলে, তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে হবে সে আসলে কীসে সামর্থ্যবান এবং কীভাবে আগের জায়গায় যেতে পারে। 

বিশেষ করে যখন ছন্দহীন অবস্থায় কেউ অনুশীলনে আসে। আমার মনে হয় সে কঠোর পরিশ্রম করেছে। সে রানে ফিরেছে দেখে ভালো লাগছে।’ লিটনের অধিনায়কত্বেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন সিমন্স। এই ক্যারিবিয় কোচ বলেন, ‘অবশ্যই ভালো হচ্ছে (টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স)। অধিনায়ক এখানে অনেক বড় অবদান রাখছে। সে তার সতীর্থদের সুন্দরমতো দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। কোচরাও স্বাধীনতা দিচ্ছেন। সব ধরনের ক্রিকেটেই এমনটা জরুরি। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজেদের দক্ষতা প্রকাশ করতে এটা (স্বাধীনতা) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজ ভারতের বিপক্ষে খেলার পর কাল আবার পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে হবে বাংলাদেশকে। এ নিয়ে বিরক্ত সিমন্স বলেন, ‘টানা দুটি টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে খেলা খুবই কঠিন। এটা কোনো ভালো বিষয় নয়, তবে আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু টানা দুইদিনে দুটি টি-টোয়েন্টি খেলা ন্যায্য নয়। মানুষ যেমনটা ভাবে, কাজটা তার চেয়ে অনেক কঠিন।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here