সর্বশেষ
Home » অর্থনীতি » ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর শপিং মলে ক্রেতা এলেও বিক্রিতে খরা

ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর শপিং মলে ক্রেতা এলেও বিক্রিতে খরা

ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর শপিংমলগুলোতে দেশি-বিদেশি পোশাকের সরবরাহ দেখা গেছে ব্যাপক। বিক্রেতারা নতুন নতুন কালেকশনে ক্রেতার নজর কাড়তে এসব পোশাক সাজিয়ে রেখেছেন দোকানগুলোতে। তবে রমজানের শুরুতে বাজারে ক্রেতার আনাগোনা দেখা গেলেও বেচাবিক্রি তেমন লক্ষ করা যায়নি। ঘুরে-ফিরে চলে যাচ্ছে ক্রেতা। অন্যদিকে অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। পণ্যের দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় দুশ্চিন্তা রয়েছে তাদের মধ্যে। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদকে সামনে রেখে পুরো প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ঈদের বাজার এখনও পুরোপুরি জমে ওঠেনি। বেশির ভাগ ক্রেতা শুধু দেখতে আসছেন। ১০-১৫ রোজার পর থেকে ক্রেতাদের ভিড় ও বিক্রি বাড়বে।

অন্যদিকে ক্রেতারা জানিয়েছেন, দেশি-বিদেশি সব পোশাকের দাম অনেক বেড়ে গেছে। পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে অনেকে হতাশা ব্যক্ত করছেন। যেটা ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
গতকাল রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, নূর ম্যানশন, চাঁদনীচক, বসুন্ধরাসহ কয়েকটি শপিংমলে ঘুরে দেখা যায়, ছোট-বড় দোকানগুলোতে রঙিন পোশাকের সমাহার। ঈদে প্রিয় মানুষদের জন্য পছন্দের পোশাক কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন অনেকে। নানা বয়সী ক্রেতারা খুঁজছেন তাদের পছন্দের পোশাক। তাদের মধ্যে অনেকে কিনছেন, আবার অনেকে ঘুরেফিরে চলে যাচ্ছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষ পছন্দ হলেও দামের হিসাব মিলাতে পারছেন না। ছোট-বড় সব পোশাকের দাম শুনে হতাশ হচ্ছেন।

শাড়ি-পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট-প্যান্ট, সেলোয়ার-কামিজ, কাফতান, ওয়ানপিস-টু-পিস-থ্রি-পিসসহ বাচ্চাদের বিভিন্ন ডিজাইনের জামা রয়েছে দোকানগুলোতে। এসব ড্রেসের দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। সেইসঙ্গে জুতা ও কসমেটিক্‌স পণ্যের সমাহারও রয়েছে অনেক দোকানে।
নূর ম্যানশনের রুবাইয়া বেবি শপের বিক্রেতা সজল বলেন, শবেবরাতের পর থেকে ভালোই বিক্রি হয়েছে। এখন একটু কম। শেষদিকে হয়তো কেনাকাটা জমবে। মাসের মাঝের দিকে রোজা হওয়ায় অবস্থা খারাপ। এদিকে জিনিসপত্রের দাম বেশি, মানুষের ইনকাম কম। কী দিয়ে মানুষ জামা-কাপড় কিনবে। কেউ তো ঠিকমতো খেতে পারছে না। আমাদেরও সংসার, পরিবার আছে। এসব অনেক প্রচার হয়, কিন্তু দাম তো কেউ কমায় না দ্রব্যমূল্যের। কোথাও কোনো পরিবর্তন নেই। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়ে যায়। কোনো কিছুর দাম যে কমছে এগুলো তো দেখি না। ঈদ এলে একটা পরিবারে অনেক খরচ হয়, বাচ্চা থেকে শুরু করে অনেক মানুষকে গিফ্‌ট করতে হয়। কীভাবে মানুষ এতো খরচ করবে। এজন্য বেশির ভাগ কেনার আশা নিয়ে এলেও বাজেটে না পোষালে ফিরে যেতে হয়। অন্য বছর এই সময় দোকানের গলির ভিতর থেকে হাঁটা যায় না ভিড়ের জন্য। শেষ পনেরো দিন হয়তো বিক্রি হতে পারে।

গোল্ডেন গেট শপিং সেন্টারের চৈতালী ফ্যাশনের দোকানি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পাঞ্জাবির ক্রেতা তেমন নেই। কয়েকদিন পর থেকে বেচাকেনা শুরু হবে। এখনো ঈদের বাজারটা জমজমাট হয়নি। বাইশ বছর ধরে ব্যবসা করি। দিন দিন খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে যাচ্ছে।

নিউমার্কেটের মিলন গার্মেন্টসের বিক্রেতা মো. মনির বলেন, আগামী শুক্রবার থেকে হয়তো বিক্রি ভালো হবে। এইবার ড্রেসগুলোর একটু বেশি দাম। দাম বেশি হওয়ার কারণে ক্রেতারা কিনতে পারছেন না। ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। আলিয়া, নায়রাকার্ট, সারারা নামের পোশাকগুলোই ঈদ কালেকশন। পনেরোশ’ থেকে শুরু করে তিন-সাড়ে চার পর্যন্ত দাম। আমাদেরও অনেক দাম দিয়ে কিনে আনতে হয়। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। যদি বিক্রি না হয় তাহলে আমাদেরও ক্ষতি হবে। আমাদেরও কর্মচারী, দোকান ভাড়া চালাতে হয়। সবার পরিবার রয়েছে। ঈদকে ঘিরে কোনো হাসি নেই আমাদের।
গাউছিয়া মার্কেটের আফ্রা ফ্যাশনের বিক্রেতা মো. রাফসান বলেন, এখনো ওইভাবে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়নি। তিন-চার দিনের মধ্যে হয়তো বিক্রি শুরু হবে। মানুষের হাতে টাকা নেই। দাম শুনে চলে যায় ক্রেতারা।

বসুন্ধরা লেভেল-১ এর স্পাইডারম্যান এর বিক্রেতা মো. সোহেল বলেন, এখনো ঈদের বাজার জমেনি। পনেরো রমজান থেকে শুরু হবে বলে আশা করছি। বাচ্চাদের সারারা, গারারা, নায়রা বেশি চাহিদা। এমব্রেলার এক বিক্রেতা বলেন, মোটামুটি কেনাবেচা হলে তবে এতোটা জমজমাট হয়নি। এখানে ছেলে-মেয়ে উভয়েরই পোশাক রয়েছে। শুক্রবার অনেক বেশি ক্রেতা ছিল।

ঝলক ফ্যাশনের বিক্রেতা মো. সুজন বলেন, মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। তবে ঈদের বাজার এখনো শুরু হয়নি। শুক্রবার ক্রেতা মোটামুটি ভালো ছিল। আশা করছি দশ রমজান থেকে বিক্রি বেশি হবে। নূর ম্যানশনের রনি ফ্যাশনের বিক্রেতা সোহেল বলেন, ক্রেতারা দাম শুনে চলে যায়। এখন কেনার থেকে মানুষ দেখছে বেশি।

রফিকুল আহমেদ তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন নিউমার্কেটে। বাচ্চাদের কয়েকটি দোকান ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। তিনি বলেন, যে পোশাক পছন্দ হচ্ছে তার দাম অনেক বেশি। এজন্য একটু ঘুরে ঘুরে দেখতে হচ্ছে। এখনও ঈদের তেমন কেনাকাটা করিনি।
ক্রেতা হালিমা বলেন, ঈদে বাচ্চাদের খুশির জন্য তো নতুন পোশাক কিনতে হয় কিন্তু এতো দাম কোনোদিন দেখিনি। যে জামা একটু পছন্দ হচ্ছে সেই জামারই দাম বেশি। একটা তিন বছরের বাচ্চাকে ২-৩ হাজার টাকা দামের পোশাক কীভাবে কিনে দেবো।

তুহিনারা বেগম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনেছি। এবার বাচ্চাদের জন্য কিনতে একটু ঘোরাঘুরি করছি। কয়েকদিনের মধ্যে কেনাকাটা সেরে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবো। মোহাম্মদপুর থেকে আসা মানসুরা বলেন, প্রথমদিকে কেনাকাটা করতে এসেছি। কিছুদিন গেলে অনেক ভিড় হবে। কিন্তু মার্কেটে এসে দেখি সবকিছুর অনেক দাম। মানুষ খাবার খেতে পারছে না ঠিকমতো এতো দাম দিয়ে জামা-কাপড় কিনবে কীভাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *