বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর দিল্লির সাথে ঢাকার সম্পর্কের বাঁক পরিবর্তন শুরু হয়েছে। কেননা দিল্লি বরাবরই শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগকে তাদের প্রধান মিত্র ভেবেছে। যার ফলে ভারত হাসিনার সকল কাজেই সমর্থন দিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে তারা ন্যায়-অন্যায় বিচার করেনি। এতে হাসিনার সাথে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের সমর্থন হারিয়ে বেশ চিন্তাতেই পড়েছে দিল্লি। তারা সার্বক্ষণিক বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সামাজিক পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর জারি করেছে। কেননা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ বাংলাদেশের বিগত সরকারই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত-বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা এড়িয়ে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের ভিন্ন চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দুকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস) এর প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল এ.এন.এ. মুনিরুজ্জামান (অব.)। তিনি মনে করেন ভারতকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সকল পক্ষের সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে।
তিনি বলেছেন, ৫ আগস্টের ঘটনার পর বাংলাদেশের রাজনীতি আর আগের অবস্থানে নেই এবং এই পরিস্থিতিতে এক পক্ষীয় কূটনীতি পরিচালনা করা যায় না এবং ভারতকে দ্রুত এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে। ঢাকার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বিনির্মাণে নতুন করে ভাবতে হবে।
হাসিনা সরকারের পতনকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সমাপ্তি বলে ব্যাখ্যা করার দরকার নেই বলে জেনারেল মুনিরুজ্জামান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাংলাদেশের জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়ানো উচিত।
এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক আরও বলেন, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে নজির স্থাপন হয়েছে সেটাই বলে দিচ্ছে দেশটির রাজনৈতিক লক্ষ্য এখন আর আগের স্থানে নেই। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। এই সরকারে ছাত্রদের একাধিক প্রতিনিধি দায়িত্বপালন করছেন। বিশেষ করে যেসকল সুশিল সমাজ এবং ছাত্র নেতারা হাসিনার পতনকে তরান্বিত করেছিল তারাই অন্তর্বর্তী সরকারে রয়েছেন। আশা করা যায় এ সরকার গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে অধিক সহায়ক হবে। ৫ই আগস্ট আকস্মিকভাবে শেখ হাসিনার শাসনের অবসানের আগাম সতর্কবার্তা দিল্লির মনোযোগ আকর্ষণ করেনি। তারা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে পাত্তা দেয়নি। তিনি আরও বলেন, ভারতকে বাংলাদেশের সাথে জড়িত থাকতে হবে এবং এক্ষেত্রে প্রলোভন এড়িয়ে যেতে হবে। ভারতকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সঠিক দিকটিতে থাকতে হবে।
মুনিরুজ্জামান ইঙ্গিত দিয়েছেন যে , বাংলাদেশ যে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে ভারতকে তা সৃজনশীল পদ্ধতিতে মোকাবিলা করতে হবে।
জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তা নজিরবিহীন বলে মনে করেছেন অনেক বিশ্লেষক।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ গণঅভ্যুত্থান বলে বিবেচিত হচ্ছে এই আন্দোলন। কেননা টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন হাসিনা। তিনি ক্ষমতায় থাকতে জোরপূর্বক গুম করতেও দ্বিধা করেননি। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। মূলত হাসিনার এই আকস্মিক পতনে দিল্লির কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। এছাড়া হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েও বিভিন্ন বিষয়ে সমীকরণ মেলাতে বেশ চিন্তিত দেশটি।