সেই বয়সভিত্তিক দল থেকে শুরু, সতীর্থ থেকে বন্ধু হয়ে উঠতে খুব বেশি সময় লাগেনি লিওনেল মেসি ও আনহেল ডি মারিয়ার। দু’জনে একসঙ্গে অলিম্পিক জিতেছেন, হেরেছেন টানা ৪ ফাইনাল। আবার বিশ্বকাপ জিতেছেন, জিতেছেন কোপার টানা দুই শিরোপা। ডি মারিয়া ফুটবলের বুট তুলে রেখেছেন এবারের কোপা আমেরিকার পর। গতকাল বুয়েন্স আয়ার্সের মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা-চিলি ম্যাচে ছিলেন তিনি। ডি মারিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেওয়ার দিনে একটি আবেগঘন ভিডিও বার্তা পাঠান মেসি।
গত ১৫ই জুলাই মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোপা আমেরিকা জয়ের ম্যাচে গোড়ালিতে চোট পান মেসি। ওইদিনই আর্জেন্টিনার জার্সিতে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলেন ডি মারিয়া। গতকাল চিলির বিপক্ষে অবশ্য মেসি ছিলেন না। কোপা আমেরিকার ওই চোট থেকে এখনও সেরে উঠতে পারেননি তিনি। মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে ডি মারিয়া ঢুকতেই তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শক।
তাকে দেওয়া হয় ‘গার্ড অব অনার’। তাকে শূন্যে ছুড়ে উদযাপন করা হয়। এসব দেখেই আবেগাক্রান্ত মেসি একটি চিঠি পাঠান ডি মারিয়াকে। অভিষেকের পর থেকে আর্জেন্টিনার সব অর্জনের সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন মেসি ও ডি মারিয়া। আর্জেন্টিনা দলে ডি মারিয়ার ১৬ বছর ও ১১৩ ম্যাচের সতীর্থ মেসি ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমি দুঃখিত। তোমার জন্য এই বিশেষ রাতে এখানে থাকতে পারলাম না। পরিবার এবং ভালোবাসার মানুষদের নিয়ে আশা করি তুমি রাতটা উপভোগ করবে। তুমি যা দিয়েছ, এমন সম্মাননাই প্রাপ্য। ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, একে অপরকে আমাদের যা যা বলার ছিল সবই বলেছি। সৌভাগ্যজনকভাবে একটি বছর (পিএসজিতে) আমরা ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করতে পেরেছি। জাতীয় দলে আমরা এত সবকিছুর মধ্য দিয়ে যাবো, এত কিছু পাবো, তা কে ভেবেছিল! আমরা সবকিছু জিতেই থেমেছি। মুহূর্তটা উপভোগ করো, কারণ এটা তোমার প্রাপ্য।’
মেসি বলেন, ‘আশা করি, তুমি এই সন্ধ্যা তোমার পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে উপভোগ করবে। আমরা অনেক কিছু শেয়ার করেছি। কে ভাবতে পেরেছিলেন যে এভাবে শেষ হয়ে যাবে এটা? আমি তোমাকে মিস করব। অনেক ভালোবাসি তোমাকে। তোমার সঙ্গে খুব শিগগিরই দেখা হবে ফিদেও। তোমাকে আমরা মিস করব।’
এদিন আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি গ্যালারিতে থাকা দর্শকরাও। স্টেডিয়ামের জায়ান্টস্ক্রিনে যখন ডি মারিয়ার ক্যারিয়ারের সোনালি সময়ের বিভিন্ন টুকরো দেখানো হচ্ছিল, গ্যালারিতেও অনেককে চোখ মুছতে দেখা যায়। দুই কন্যা ও স্ত্রীকে শক্ত করে ধরে তখন নিজের আবেগ ধরে রাখার চেষ্টায় ছিলেন ডি মারিয়া। যদিও পারেননি, চোখ ভেঙে বেরিয়ে এসেছে পানি। তিনি এখন শুধু বেনফিকা ক্লাবের খেলোয়াড়। আর্জেন্টিনার জার্সি আর পড়বেন না। আর্জেন্টিনার জার্সিতে ১৪৫ ম্যাচে ৩১ গোলের মালিক বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ এবং এখন থেকে শুধুই আরেকজন ভক্ত। বিশ্বকাপ এবং কোপা আমেরিকায় (দর্শক হিসেবে) থাকবো।’