প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন নাকচের হাইকোর্টের রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন আদালত। সোমবার মির্জা ফখরুলের জামিন প্রশ্নে রুল খারিজ করে হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে রুলের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ১০ই জানুয়ারি রায় দেন।
রায়ে আদালত বলেন, আবেদনকারী বিপর্যয়কর ও উচ্ছৃঙ্খল এসব ঘটনার পরিকল্পনাকারী বা তাঁর কোনো ভূমিকা ছিল কি না, সে বিষয়ে কেবল সুষ্ঠু তদন্তের পর সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। তদন্তের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে এই পর্যায়ে তার মুক্তির জন্য জামিন দেয়া সহায়ক হবে না বলে আমরা মনে করছি। (মামলায়) কিছু ধারা আছে জামিন অযোগ্য। প্রজাতন্ত্র ও জনগণের নিরাপত্তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা রুলটি খারিজ করছি। মাননীয় প্রধান বিচারপতি প্রজাতন্ত্রের তিনটি অঙ্গের একটির প্রধান। সে কারণে এ ধরনের হামলার অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল হতে পারে। মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদনে যুক্তি হিসেবে তার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
তিনি কোনো অসুস্থতায় ভুগলে তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায়ে বলা হয়, অভিযুক্ত আবেদনকারী (মির্জা ফখরুল) দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন করছেন, যাকে তিনি জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলন দাবি করে আসছেন। দুর্ভাগ্যবশত, বিগত কয়েক মাসে দেখা গেছে যে, কথিত ওই ভোটাধিকারের দাবি দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে যুক্ত হয়েছে। যাতে প্রাণহানি, অগ্নিসংযোগ, হাসপাতাল, এম্বুলেন্স এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনকারী সরকারি ও ব্যক্তিগত যানবাহন, পুলিশের গাড়িতে হামলার মতো ঘটনা রয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, কথিত আন্দোলনকারীরাই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। আমরা এসব অযৌক্তিক ও ধ্বংসাত্মক ঘটনা বিবেচনায় নিয়েছি, যেগুলো দৃশ্যত দেশে আতঙ্ক তৈরি করেছে। বস্তুত দেশ ও দেশের জনগণকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গত ২২শে নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। এরপর গত ৫ই ডিসেম্বর জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি। আবেদনের শুনানি নিয়ে ৭ই ডিসেম্বর হাইকোর্ট জামিন প্রশ্নে রুল দেন। মামলায় মির্জা ফখরুলকে কেন জামিন দেয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। রাষ্ট্রপক্ষকে এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পরে হাইকোর্ট রুল খারিজ করে মির্জা ফখরুলের জামিন নাকচ করে দেন।
উল্লেখ্য, প্রধান চিারপতি বাসভবনে হামলা মামলায় বেশ কয়েকজন আইনজীবীকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত সোমবার বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে ১৫ই মার্চ পর্যন্ত আগাম জামিন দিয়েছেন।