এফএ কাপ ফাইনালের আগেই গুঞ্জন জিতলেও চাকরি হারাবেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগ। বৃটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এমন প্রতিবেদনে হইচই পড়ে যায় ফুটবল বিশ্বে। তবে মাঠের খেলায় টেন হাগের শিষ্যরা দুর্দান্ত খেলেছেন। সাম্প্রতিক বিচারে সবদিকেই এগিয়ে থাকা ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে এফএ কাপের শিরোপা জিতেছে রেড ডেভিলরা। আট বছর পর এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। জয়ের পর অকপট টেন হাগ বলেন, ইউনাইটেড আমাকে আর না চাইলে অন্য কোথাও গিয়ে ট্রফি জিতবেন।
শনিবার ওয়েম্বলিতে এফএ কাপের ফাইনালে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী সিটিকে ২-১ গোলে হারায় ইউনাইটেড। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন ১৯ বছর বয়সী দুই তরুণ আলেহান্দ্রো গারনাচো ও কোবি মাইনু। শেষ দিকে জেরেমি ডকু এক গোল শোধ করলেও ম্যাচে সমতায় ফিরতে পারেনি সিটিজেনরা। এর আগে গত আসরে সিটির বিপক্ষে একই ব্যবধানে হারে রানার্স আপ হয় ইউনাইটেড।
এবার সেই হারের শোধও নিলো ওল্ড ট্রাফোর্ডের দলটি।
ম্যাচ শেষে শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতার সঙ্গে নিজের ভবিষ্যত নিয়েও কথা বলতে হলো টেন হাগকে । তিনি বলেন, ‘দুই বছরে দুটি শিরোপা এবং তিনটি ফাইনাল খারাপ না। যখন আমি দায়িত্ব নিই, তখন আমরা বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিলাম। দল এখন উন্নতি করছে, জিতছে। যদি তারা আমাকে না চায়, তবে আমি অন্য কোথাও গিয়ে ট্রফি জিতব। কারণ, এটাই আমি করি। ’
এফএ কাপ জিতলেও ইউনাইটেডের জন্য সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমটা ভুলে যাওয়ার মতোই। আট নম্বরে থেকে লীগ শেষ করেছে তারা। তবে পয়েন্ট তালিকায় আটে থাকলেও এফএ কাপ জেতায় এখন ইউরোপা লিগে খেলার সুযোগ পাবে রেড ডেভিলরা।
এরপরও টেন হাগের ওপর ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষের আস্থা হারিয়েছে বলে জানায় একাধিক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। টেন হাগ অবশ্য শিরোপা জয়ের পর তার ওপর ইউনাইটেডের মালিক স্যার জিম র্যাটক্লিফের আস্থা থাকার কথাই জানিয়েছেন। এর আগেও তিনি বলেছিলেন তাকে বরখাস্ত করার আগে দলে এত চোটের দিকেও নজর থাকবে মালিকপক্ষের।
তবে গুঞ্জন রয়েছে, টেন হাগের বিকল্প হিসেবে এরই মধ্যে একাধিক কোচের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে টেন হাগ বলেন, ‘আমি জানি না, তারা এটা করেছে কি না। এ প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। আমি জানি না। হয়তো আপনাদের জানার সূত্র আছে, আমার তা নেই। আমি একটি প্রজেক্টে আছি এবং আমাদের যেখানে থাকার কথা, আমরা সেখানেই আছি। আমরা ভবিষ্যতের জন্য দল তৈরি করছি।’
এর আগে দুই নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ের প্রথম ১৫ মিনিটে যদিও উল্লেখযোগ্য কিছুই হয়নি। তবে ম্যাচের ৩০তম মিনিটে সিটির ভার্দিওলের ভুলে এগিয়ে যায় ইউনাইটেড। ইউনাইটেডের মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা একটি বল বাঁচাতে পোস্ট থেকে বেরিয়ে আসেন সিটির গোলকিপার স্টেফান ওর্তেগা। অন্যদিকে ইয়োস্কো ভার্দিওল দৌড়ে এসে তিনি হেডে ব্যাক পাস দেওয়ার চেষ্টা করেন ওর্তেগাকে। কিন্তু সেটা উড়ে যায় এগিয়ে আসা ওর্টেগার মাথার ওপর দিয়ে। এরপর ফাঁকায় বল পেয়ে সহজেই জালে পাঠিয়ে দেন ইউনাইটেডের আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড গারনাচো।
প্রথমার্ধে মাত্র এক-চতুর্থাংশ সময় বল দখলে রাখা ইউনাইটেড ৩৯তম মিনিটে দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে ব্যবধান দ্বিগুণ করে। গারনাচো বল পাঠান ফার্নান্দেজের কাছে, সেটা ফার্নান্দেজ দেন বক্সের বাঁ দিকে থাকা ম্যাইনোকে। দুর্দান্ত এক গড়ানো শটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন ইউনাইটেডের এই ইংলিশ ফুটবলার।
বিরতির পর সিটির আক্রমণে জোর বাড়ে। পরপর দুই মিনিটে দুটি সুবর্ণ সুযোগও পায় তারা; কিন্তু সাফল্য মেলেনি। প্রতিপক্ষের আক্রমণের ঢেউ সামলাতে নিজেদের সীমানা থেকেই বের হতে পারছিল না ইউনাইটেড। ৮৭তম মিনিটে গোল ব্যবধান কমান সিটির জোরেমু ডোকু। বক্সের বাইরে থেকে দোকুর জোরাল নিচু শট ঠেকাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন ইউনাইটেড গোলরক্ষক, বলে হাতও লাগান তিনি কিন্তু জালে যাওয়া ঠেকাতে পারেননি তিনি।
প্রথমে ৭ মিনিট অতিরিক্ত সময় দিলেও সেটা গড়ায় ১০ মিনিট পর্যন্ত। তবে এই সময়ে ইউনাইটেডের রক্ষণে একাধিকবার হামলে পড়লেও সমতাসূচক গোলের দেখা পায়নি সিটি।