শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশে তেমন কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এমনকি ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠান পালনেও বাধার মুখে পড়ে দলটি। একমাত্র গোপালগঞ্জে কয়েকটি কর্মসূচি পালিত হয়েছে৷ তবে দেশে প্রায় ‘উধাও’ বা দলটির কার্যক্রম প্রায় বন্ধ থাকলেও বিদেশ থেকেই সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।
গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। দিন দশেক পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতার নামে গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিবৃতি আসতে শুরু করে৷ তবে এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিমের নামে আসা বিবৃতিগুলোর সত্যতা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফলে তা দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমেই জায়গা করে নিতে পারেনি।অন্যদিকে দেশের ভেতরে আত্মগোপনে থাকা কোনো কেন্দ্রীয় নেতা এখনও প্রকাশ্যে আসেননি। এমনকি দলের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়নি।
দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মুঠোফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
দলীয় কোনো কর্মসূচি না থাকায় এখন অনেকটাই ‘ব্যাকফুটে’ স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে থাকা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিজ নিজ উদ্যোগে নিরাপদ অবস্থানে থাকার চেষ্টা করছেন।
ফরিদপুরের একজন সাবেক সংসদ সদস্য ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আমি তো কারও কোনো ক্ষতি করি নাই। দলের পদে আছি। তবে আপাতত এলাকায় যাচ্ছি না। ঢাকাতেই নিজের কাজকর্ম নিয়ে আছি।
স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে যারা সুযোগ পেয়েছেন দেশ ছেড়েছেন, কেউ কেউ দেশের মধ্যেই আত্মগোপনে রয়েছেন। রাজধানীর একটি ওয়ার্ডের সাবেক একজন কাউন্সিলরের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হলেও তিনি তার অবস্থান সম্পর্কে জানাতে অস্বীকৃতি জানান। বলেন, আমি নিজের সুবিধামতো অবস্থানেই আছি। নিরাপদেই আছি।
একই তথ্য জানিয়েছেন সদ্য ক্ষমতাচ্যুত হওয়া দলটির একটি সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ এক নেতা। ঢাকা মেইলকে তিনি জানান, বর্তমানে তাদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা হচ্ছে৷ তারা সে বিষয়ের দিকেই বেশি নজর রাখছেন। কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তারা আপাতত নেই।
এই নেতা বলেন, আমাদের নামে অনেক মামলা দেওয়া হচ্ছে। এসব মামলা টিকবে না। আমরা একেবারেই জড়িত না। এমনকি নিজের এলাকা যেখানে যাইনি, সেখানেও আমার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা এসব দিকে খেয়াল রাখছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক কার্যক্রম হবে না, এটাই স্বাভাবিক।
এদিকে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজে নেতাকর্মীদের প্রতি একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে জানানো হয়, দলের সাবেক হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নম্বর দেয়া যায়। স্থানীয় কর্মসূচি ও সকল ঘটনার তথ্য নতুন এই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের মাধ্যমে কেন্দ্রে জানাতে বলা হয়।
এর মাধ্যমে একটা বিষয় স্পষ্ট— দেশ থেকে নয়, এখন আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে। দেশের বাইরে থাকা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠন তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক বছর ৩-৪টির বেশি কর্মসূচি পালন করেনি এমন সংগঠনও গত ৫ আগস্টের পর ডজনখানেক কর্মসূচি পালন করে ফেলেছে৷
জানা গেছে, দেশের বাইরে আওয়ামী লীগের সবশেষ কর্মসূচি পালিত হয়েছে গত ১৫ সেপ্টেম্বর। অস্ট্রিয়া প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এ কর্মসূচিতে যোগ দেন। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার হেলওয়াগটাসে তারা এক সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছেন।
এতে যোগ দেন সর্বইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম, অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, রাশিয়ায় বিভিন্ন কমিটি বর্তমানে আওয়ামী লীগকে চাঙা রাখার চেষ্টায় রয়েছে।
তাদের সেসব আয়োজন আওয়ামী লীগের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পেইজে নিয়মিত তুলে ধরা হচ্ছে৷