রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত বেসরকারি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ (২৩)কে হত্যার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন- মো. আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) ও আল আমিন সানি (১৯)। রোববার রাত সোয়া ১২টার দিকে মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে বনানী থানা পুলিশ। গতকাল আদালত তাদের তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এদিকে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী শাখার দুই নেতাসহ প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন। একই সঙ্গে ঘটনার সূত্রপাত করা ওই দুই নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইউনিভার্সিটি অফ স্কলার্সকে চিঠি দিয়েছে প্রাইম এশিয়া কর্তৃপক্ষ।
পারভেজ হত্যার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মিডটার্ম পরীক্ষা শেষে শনিবার বিকাল ৪টার দিকে বন্ধু তরিকুল, সুকর্ণ, ইমতিয়াজসহ কয়েকজনের সঙ্গে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে র্যানকন বিল্ডিংয়ের সামনের মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের পাশে বড় ছাতার নিচে একটি শিঙাড়ার দোকানে দাঁড়িয়ে হাসি-ঠাট্টা করছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের (৬ষ্ঠ সেমিস্টার) ২২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ। তাদের পেছনেই ফুটপাথের ওপর একজন হিজাব ও একজন কমলা রঙের থ্রিপিস পরে দাঁড়ানো ছিল ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের দুজন ছাত্রী। তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্র্থী ও ওই দুই নারী শিক্ষার্থীদের বন্ধু মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবুজর গিফারি পিয়াস (২০) ও মাহাথির হাসান (২০)। এসময় হঠাৎ ওই দুই নারী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন- তাদেরকে দেখেই হাসাহাসি করেছে পারভেজ। এরপরই ওই দুই নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে পারভেজ কেন হাসাহাসি করছে সেই কারণ জানতে পারভেজের কাছে যান মেহেরাজ, পিয়াস ও মাহাথির। পরে বিষয়টি নিয়ে তাদের উভয়ের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেই তর্কাতর্কির বিষয়টি নজরে পড়ে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের লেকচারার সুষমা ছোঁয়াতী এবং সাইকোলজি বিভাগের আবুল হাশেমের। তারা উভয়পক্ষকে ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান। প্রক্টর অফিসে শিক্ষক সুষমা ছোঁয়াতী ও আবুল হাশেম ও ইংরেজি বিভাগের মশিউর রহমান উভয় পক্ষের কাছে বিষয়টি জানতে চান। তখন ওই নারী শিক্ষার্থী আবারো অভিযোগ করেন-পারভেজ তাদের উত্ত্যক্ত করেছেন। পারভেজ তখনো বলেন- আমি কাউকে উত্ত্যক্ত করিনি। আমরা বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম আর হাসাহাসি করছিলাম। এরপরও শিক্ষকেরা পারভেজকে ওই দুই নারীকে সরি বলতে বলেন। পারভেজ সরিও বলেন। বিষয়টি মীমাংসা হওয়ার পর উভয়পক্ষ বের হয়ে যায়। কিন্তু প্রক্টর অফিস থেকেই মেহেরাজ, আবুজর গিফারি পিয়াসরা পারভেজকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।
এরপর আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শনিবার বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে পারভেজ ও তার বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তার ওপর নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছেন। এসময় হলুদ টিশার্ট-কালো প্যান্ট, কালো শার্ট-প্যান্ট পরাসহ বেশ কয়েকজন হাতে বড় বড় ধারালো অস্ত্র নিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ১৭ নম্বর রোডে দাঁড়ানো পারভেজদের সামনে দিয়ে মহড়া দিতে থাকে। তাদের মধ্য থেকে হঠাৎ পিঠে কালো ব্যাগ নিয়ে প্রথম একজন দৌড়ে পারভেজের দিকে চলে আসে। এসময় তার পেছন দিক থেকে ও দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির পেছন দিক থেকে আরও ৮-১০ যুবক হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে দৌড়ে এসে পারভেজকে ঘিরে কোপাতে থাকে। তাদের মধ্য থেকে সাদা শার্ট পরা একজন যুবক প্রথম পারভেজকে ছুরি দিয়ে বুকে আঘাত করে। এরপর কালো গেঞ্জি পরা যুবকটি পারভেজের বুকে ছুরি মারে। এরপর সাদা ও নেভি ব্লু রঙের ১০ নম্বর ফুলস্লিভ জার্সি পরা আরেকটি যুবক তার হাতে থাকা চাকু দিয়ে পারভেজকে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে। এসময় পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে নিচে পড়ে যান। এরপরও তাকে মারধর করা অব্যাহত থাকে।
এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় সহপাঠীরা তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে ভিডিওতে দেখা যায়, হাসপাতালে যাওয়ার পথে পারভেজের কোনো সাড়া পাচ্ছিলেন না তাকে বহন করে নিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। পরে সিএনজিযোগে চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পারভেজকে মৃত ঘোষণা করেন।