গত বছর বাজারে আলুর দাম ভালো পাওয়ায় রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা এবার বেশি পরিমাণ জমিতে আলুর আবাদ করেছিলেন। কিন্তু বৈরী আবহওায় নিজস্ব পদ্ধতিতে সংরক্ষতি আলু নষ্ট হওয়ার উপক্রম হওয়ায় কৃষকরা ৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল রংপুর নগরীর শাহীপাড়া এলাকায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতে এসেছেন সাহেবগঞ্জ এলাকার শাহজাহান আলী। তার ভ্যানে ছিল ২৫ কেজি ওজনের এক বস্তা আলুসহ পিঁয়াজ, রসুন এবং কাঁচা মরিচ। তিনি প্রতি কেজি আলু ১০ টাকা করে বিক্রি করতে চাইছিলেন কিন্তু কোনো ক্রেতা পাচ্ছিলেন না। অবশেষে কয়েকজন মিলে ছয় টাকা কেজি দরে শাহজাহানের কাছ থেকে ২৫ কেজি আলু কেনেন। এটা হলো খুচরা বাজারের দৃশ্য। তবে পাইকারি বাজারের আলুর ক্রেতাই নেই। যারা হিমাগারে আলু রাখতে না পেরে বাড়িতেই নিজস্ব পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করেছিলন, তপ্ত হাওয়ায় আলু পানি ছাড়তে শুরু করায় তারা চার-পাঁচ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে আলুু আবাদ করে লাখ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। এতে পাওনাদারদের চাপে আলু চাষিরা দিশাহারা, পরিবারেও দেখা দিয়েছে অশান্তি।

কৃষকরা জানান, এক দোন (২২ শতক) জমিতে আলুর বীজ লাগে ২৪ হাজার টাকার। এ ছাড়া রোপণ, সার, উত্তোলন ইত্যাদির খরচ পরে ১৯ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এক দোন জমিতে আলুর উৎপাদন খরচ হয় ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ কেজি। সে ক্ষেত্রে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৯ থেকে ২০ টাকা। তবে সংরক্ষণের জন্য আলু হিমাগারে রাখলে উৎপাদন খরচে কেজিতে যোগ হবে আরও আট টাকা। উৎপাদনেই আলুর কেজি পড়ছে ২৮ টাকা। রংপুরের পাইকারি ও খুচরা বাজারদর অনুযায়ী প্রতি কেজি আলুতে কৃষকদের লোকসান হচ্ছে ২৪ থেকে ২৫ টাকা। জানা গেছে, গত কয়েক বছর থেকে বাজারে আলুর দাম ভালো পাওয়ায় এবার রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা বেশি পরিমাণ জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৩৯ হেক্টর জমিতে। ফলনও ভালো হয়েছে। ফলে আলুর উৎপাদনও হয়েছে হেক্টরপ্রতি ২৬ টনের বেশি। মোট উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩২ লাখ মেট্রিক টন আলু। কিন্তু রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার ৭১টি হিমাগারের ধারণক্ষমতা মাত্র সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন। দু-একজন বড় কৃষক অথবা ব্যবসায়ী বাইরের জেলার হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করলেও হিমাগারের বাইরে রয়েছে ২২ থেকে ২৪ লাখ মেট্রিক টন আলু। এসব আলু কৃষকরা নিজস্ব প্রদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে থাকেন। তবে এবার অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে সংরক্ষতি আলু নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই নামমাত্র মূল্যে কৃষকরা আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। রংপুর নগরীর চিলমন এলাকার আলু চাষি গৌরাঙ্গ রায় বলেন. লাভের আশায় ধারদেনা করে তিনি ১২ বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছিলেন। হিমাগারে রাখতে না পেরে বাড়িতেই আলু সংরক্ষণ করেছিলেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি আড়াই লাখ টাকা লোকসান দিয়ে আলু বিক্রি করে দিয়েছেন। লাভ তো দূরের কথা এখন পাওনাদারের চাপে দিশাহারা অবস্থা। এনিয়ে পরিবারে দেখা দিয়েছে অশান্তি। পীরগাছা ছেচাকান্দির মজিদ আলীরও একই অবস্থা। অনেক স্বপ্ন নিয়ে আলুর আবাদ করলেও এখন লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। মিঠাপুকুরের রানীপুকুর এলাকার এন্তাজ আলী জানান, লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here