কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবক্সে এবার ২৮ বস্তা টাকা দান হিসেবে পাওয়া গেছে। এছাড়া পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার। শনিবার সকাল ৭টায় মসজিদটির ১০টি দানবক্স ও একটি ট্রাঙ্ক খোলার মধ্য দিয়ে টাকা গণনার কাজ শুরু করা হয়। এখন গণনা চলছে।

পাগলা মসজিদ মাদরাসা ও আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার মোট ২৮৬ জন ছাত্র এবং রূপালী ব্যাংকের ৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে মোট ৩৬৬ জন টাকা গণনার কাজ করছেন। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসারের ৭০ জন সদস্য ছাড়াও মসজিদ-মাদরাসার ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের সহায়তা করছেন।

এবার চার মাস ১২ দিন পর মসজিদের দানবক্স খোলা হয়। এর আগে সর্বশেষ গত ৩০শে নভেম্বর এ মসজিদের দানবক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ২৯ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। পরে টাকা গণনা করে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া পাওয়া যায় বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা, রূপা ও হীরার গয়না। যা ছিলো এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

শনিবার সকাল ৭টায় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর নেতৃত্বে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক জেসমিন আক্তারের উপস্থিতিতে দানবক্স খোলা হয়।

এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাহিদ হাসান খান, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এরশাদ মিয়া, রূপালী ব্যাংকের এজিএম মোহাম্মদ আলী হারেছী এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ মসজিদ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে সেনাসদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরের ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে ১০টি লোহার দানবক্স আছে। প্রতি তিন থেকে চার মাস পর পর এই দানবক্স খোলা হয়। এবার সকাল ৭টা থেকে দানবক্সগুলো খোলার কাজ শুরু হয়। প্রথমে টাকাগুলো লোহার দানবক্স থেকে বস্তায় ভরা হয়। পরে মসজিদের দোতলায় নিয়ে মেঝেতে ঢালা হয়। এরপর শুরু হয় টাকা গণনার কাজ।

জানা যায়, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে এই মসজিদে দান করছেন। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাদের মনের আশা পূরণ হয়েছে। আর এ কারণেই দিন দিন দানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, ‘গণনা শেষ হলে টাকার পরিমাণ জানা যাবে। দানবক্স থেকে পাওয়া সব টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হবে।’ জেলা প্রশাসক আরো জানান, পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেয়ার পাশাপাশি অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তা করা হয়ে থাকে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানান, সকাল থেকে টাকার দানবক্স খোলা, বস্তায় ভরে এনে গণনা শেষে ব্যাংক সমস্ত টাকা নিরাপদে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তার কাজে তিনিসহ পুলিশ সদস্যরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া গণনার দিন ছাড়াও বাকি দিনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন দানবক্স নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেন।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। বর্তমানে ৩.৮৮ একর ভূমির উপর সম্প্রসারিত পাগলা মসজিদ এলাকায় মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। স্বভাবতই ঐতিহাসিক এই মসজিদকে নিয়ে জেলার ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলেই গর্ববোধ করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here