ঢাকাস্থ চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন দাবি করেছেন- বিগত সরকারের শেষ সময়ে এসে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি চীন। দু’টি দলের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সে সময়ে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছিল। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন দু’বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্বরত চীনের রাষ্ট্রদূত। ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সমপ্রতি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদল চীন সফর করেছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, খোলাখুলিভাবে বললে, গত ১০ বছরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু এখন সময় এসেছে, তাই পুনঃযোগাযোগ শুরু হয়েছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায় জানিয়ে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন- সমপ্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামীর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল চীন সফর করেছে এবং সেখানে শাসনব্যবস্থা সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন যাই হোক না কেন, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন- আমরা টেকসই উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করে যাবো। রাষ্ট্রদূতের কাছে সম্পূরক প্রশ্ন ছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হতে কীভাবে বাধা দেয়া হতো? জবাবে ইয়াও ওয়েন বলেন, আমি বিশ্বাস করি গত ক’বছরের পরিস্থিতি কেমন ছিল? সেটা এখানে উপস্থিত (সাংবাদিকেরা) সবাই অনুধাবন করতে পারেন। তাই এ নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আর কিছু বলতে চাই না। স্মরণ করা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল গত মাসে চীন সফর করে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে এই সফর হয়। অন্যদিকে চলতি মাসে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করে।
নির্বাচন ও জাতীয় সরকার গঠন প্রসঙ্গ: এদিকে ডিকাব টকের প্রশ্নোত্তর-পর্বে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন স্পষ্ট করেই বলেন, চীন বিশ্বাস করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হবে। নির্বাচন ও জাতীয় সরকার গঠন নিয়ে যে আলোচনা চলছে তা একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে চীনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই এবং থাকবেও না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেইজিংয়ের হস্তক্ষেপ না করার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনকার্যকে চীন সমর্থন করে এবং বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও সফল জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানায়। একইসঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় পরিস্থিতির উপযোগী একটি উন্নয়ন পথ অনুসরণের প্রচেষ্টায়ও চীন সমর্থন অব্যাহত রাখবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চীনের অবস্থান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচনের সময় নির্ধারণ বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের নিজস্ব বিষয়। একজন বিদেশি কূটনীতিক হিসেবে এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সরকার গঠন করা হবে কিনা- সেটিও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে নিয়ে চীনের স্বপ্ন: এদিকে ডিকাব টকের শুরু থেকে শেষ অবধি বিভিন্ন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে নিয়ে চীনের স্বপ্নের কথা বলেন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তার ভাষ্যটি ছিল এমন- বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায় চীন। এই উদ্যোগে অন্য কিছু দেশও আগ্রহ দেখাচ্ছে। লক্ষ্য হলো-আঞ্চলিক শান্তি, উন্নয়ন এবং প্রতিবেশীদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তানের সম্ভাব্য ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ কেবল রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে জানিয়ে তিনি বলেন- চীন প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মিলে উন্নত, সমৃদ্ধ অঞ্চল গড়ে তুলতে চায়।’
অন্যান্য প্রসঙ্গ: ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সামপ্রতিক বিমান দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গভীর শোক প্রকাশ করেন। বলেন, এই ঘটনায় চীন গভীরভাবে মর্মাহত। বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে চীন সহায়তা দিবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ সরকার চাইলে চীন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন সভাপতিত্ব করেন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুজ্জামান মামুন স্বাগত বক্তব্য দেন।