ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৩৬। আক্রন্ত হয়েছেন কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ। সিকিমে সেনা ক্যাম্পে ভূমিধস হয়েছে। তাতে মারা গেছেন তিন জন। নিখোঁজ ৬ জন। বার্তা সংস্থা পিটিআই’কে উদ্ধৃত করে অনলাইন দ্য হিন্দু বলছে, সোমবার বন্যা পরিস্থিতি জটিল অবস্থায় ছিল। গত কয়েক দিনে সেখানে ভারি বর্ষণ হয়। এর ফলে দেখা দেয় মারাত্মক বন্যা ও ভূমিধস। এতে আসামে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১ জন। এরপরে অরুণাচল প্রদেশে নিহত হয়েছেন ১০ জন। মেঘালয়ে ৬, মিজোরামে ৫, সিকিমে তিন এবং ত্রিপুরায় একজন মারা গেছেন। আসামের ২২টি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। 

এর ফলে কমপক্ষে ৫ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই অঞ্চলে একই সঙ্গে ১৫টি নদীর পানি উপচে পড়ছে। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্বশর্মা এরই মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলা সফর করেছেন। এখানকার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। তিনি এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সম্ভাব্য সব রকম সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন। ভারি বর্ষণের কারণে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক, রেল ও ফেরি সার্ভিস বিঘ্নিত হচ্ছে। সিকিসের ছাতেন এলাকায় ভূমিধসের শিকার হয় একটি সামরিক ক্যাম্প। ফলে সেখানে তিনজন সেনা সদস্য মারা গেছেন। ৬ জন রয়েছেন নিখোঁজ। রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাঙ্গান জেলার লাচেন শহরের কাছে এই ভূমিধস হয়। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মৃত সেনা সদস্যরা হলেন হাবিলদার লক্ষবিন্দর সিং, ল্যান্স নায়েক মুনশি ঠাকুর ও পর্টার অভিষেক লাখাদা। ডিজিপি অক্ষয় সাচদেব বলেছেন, সিকিমের লাচুং এবং চুংথাং শহরে বৃষ্টি ও ভূমিধসের পর মোট ১৬৭৮ জন পর্যটককে উদ্ধার করা হয়েছে। ওদিকে লাচেনে আটকে আছেন কমপক্ষে ১০০ পর্যটক। উল্লেখ্য, ২৯ শে থেকে সেখানে অব্যাহত বৃষ্টি হচ্ছে। এতে মাঙ্গান জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূমিধস হয়েছে। ফলে ফিদাং এবং সাংকালাং এর বেশ কিছু সেতুর আংশিক ক্ষতি হয়েছে।

 বিঘ্নিত হয়েছেন অনেক স্থানের সড়ক যোগাযোগ। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৩০ মিলিমিটারের ওপরে পৌঁছে যাওয়ায় লাচেন, রাচুং, গুরুদোঙ্গমার, ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার এবং জিরো পয়েন্টের মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলোর রুটে বড় রকমের ক্ষতি হয়েছে। পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল বিষয়ক কর্তৃপক্ষ এক সতর্কতায় সব পর্যটককে সিকিম সফরের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সিকিমের মুখ্য সচিব আর তেলাংয়ের সভাপতিত্বে মাঙ্গান জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে। এতে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি, আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার, বিদ্যুৎ, সড়ক, টেলিযোগাযোগের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবাখাত পুনঃস্থাপনের ওপর জোর দেয়া হয়। মনিপুরে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ১৯ হাজার মানুষ। সেখানে অনেক নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীতীরবর্তী বাঁধথ ভেঙে গেছে। কমপক্ষে ৩৩৬৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ৮১১ জন। ৩১টি ত্রাণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। 

এর বেশির ভাগই ইম্ফল পূর্ব জেলায়। অরুণাচলের লোহিত জেলায় আরও একজন মানুষ মারা গেছেন। এতে সেখানে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০। স্টেট ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার বলেছে, ২৩টি জেলায় ১৫৬টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। গভর্নর লেফটেন্যান্ট কে.টি পারনায়েক (অবসরপ্রাপ্ত) জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। রিপোর্টে বলা হয়, রাজ্যের বড় বড় নদী এবং তার শাখা নদীগুলো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে পশ্চিম কামেঙ্গ, কামলে, লোয়ার ও আপার সুবানসিরি, পাপুম পাড়ে, দিবাঙ্গ ভ্যালি, লোয়ার দিবাং ভ্যালি, লোহিত, ছাঙ্গলাঙ্গ, ক্রা দাদি, কুরুঙ্গ কুমি ও লঙ্গডিং জেলায়। তবে ত্রিপুরায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। কারণ, সোমবার সেখানে বৃষ্টি হয়নি। বিপদসীমার অনেকটা নিচ দিয়ে সেখানে নদনদী প্রবাহিত হচ্ছিল। মিজোরামে ভারি বৃষ্টি, ভূমিধস, পাথরধস, পানিবন্দ থাকার কারণে সব স্কুল বন্ধ রয়েছে। এর আগে ২৯শে মে ও ৩০শে মে দুইদিন স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here