এক যুগ পেরিয়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জিততে শিখেছে বাংলাদেশ। ২০২২ এ প্রথম টেস্ট জয় পেয়েছে। এ বছর চলতি সিরিজে জয় পেয়েছে ওয়ানডেতেও। তিন ফরম্যাটে যে পরাজয়ের শিকলে বাঁধা পড়েছিলো এবার তা চিরতরে অবসান হওয়ার সুযোগ। কাল শুরু হচ্ছে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। টানা দুই ম্যাচ হেরে ওয়ানডে সিরিজ হাতছাড়া হলেও দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তৃতীয় ম্যাচে শুধু হোয়াইটওয়াশের হাত থেকেই রক্ষা পায়নি তুলে নিয়েছে রেকর্ড গড়া ঐতিহাসিক জয়। গেল দুই দিন নিউজিল্যান্ডে ফুরফুরে মেজাজে বড়দিনের ছুটি কাটাচ্ছে টাইগাররা। গোটা দল ঘুরে বেরিয়েছে, উপভোগ করেছে খৃস্ট ধর্মালম্বিদের সবচেয়ে বড় উৎসব। তবে আজ তারা মাঠে নামবে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রস্তুতি নিতে।
অধিনায়ক আগেই বলেছেন ঘুরতে গেলেও তাদের মাথাতে থাকবে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আলাদা চিন্তা।কারণ ইতিহাস গড়ার সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি এবারের সফরে। নিউজিল্যান্ডে ১১টি টি-টোয়েন্টি খেলে এখনও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সেখানেও প্রথম জয় এমনকি প্রথম সিরিজ জয়ের হাতছানি তো আছেই! তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি কাল এই নেপিয়ারেই। পরের দুই ম্যাচ মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ২৯ ও ৩১শে ডিসেম্বর। দুই ভেন্যুতেই রয়েছে বাংলাদেশের সুখস্মৃতি। তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে নেপিয়ারে। আর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্টে বাংলাদেশের একমাত্র জয়টি মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। সর্বশেষ জয়ে আত্মবিশ্বাস পেলেও আলাদা ফরম্যাটে ভিন্ন পরিকল্পনার কথাই বলছেন অধিনায়ক শান্ত। তিনি বলেছেন, ‘এই ম্যাচ (শেষ ওয়ানডে) আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি আলাদা ফরম্যাট। আমরা ওভাবেই তার জন্য পরিকল্পনা করবো।
আমরা কিছু জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার চিন্তা করেছি, কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে কিছুদিনের ভেতরই টি-টোয়েন্টি খেলতে হবে।’ ২০১০-এ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। সেটি ছিল এক ম্যাচের। এরপর ২০১৭ ও ২০২১ এ তিন ম্যাচের দুটি টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফিরেছে দল। অন্যদিকে নিজেদের মাটিতে কিউইদের বিপক্ষে ২০১৩ তে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিল টাইগাররা। সেবার ১-০ তে হেরেছে। তবে সবশেষ ২০২১ সালে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৩-২ এ জিতে নেয় বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে পাঁচ সিরিজের একটিতে জয় আর ৪ টিতে হেরেছে টাইগাররা। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ সহ সব মিলিয়ে ১৭ বার আন্তর্জতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। সেখানে বাংলাদেশ জিতেছে তিন ম্যাচে। পরিসংখ্যান বলছে দুই দলের লড়াইয়ে বেশ এগিয়ে কিউইরা।
তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাঠে যেখানে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে জয়ই ছিল অধরা, সেখানে সিরিজ জয়ের আশাকে বাড়াবাড়ি বা অলীক কল্পনাও মনে হতে পারে কারও। তবে অধিনায়ক শান্তর দাবি, অবাস্তব কোনো ভাবনা তার ছিল না। বরং দলের মানসিকতা, নিজেদের সামর্থ্যে প্রবল বিশ্বাস আর প্রস্তুতি থেকেই সিরিজ জয়ের আশা জেগেছিল তার। নিজের দল নিয়ে গর্বিত ও আত্মবিশ্বাসী শান্ত বলেন, ‘আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, খেলা শুরুর আগে আমাদের কাজটা কী আমাদের প্রস্তুতি, কাজের প্রতি আমরা কতটা সৎ, আমরা কী করতে চাই, এসব গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বড় কথা যে, আমরা কতটুকু বিশ্বাস করছি।
দল হিসেবে আমার খুবই বিশ্বাস যে এই দল আরও ভালো করতে পারে। আমার কাছে সবসময়ই গ্রুপটাকে দেখে মনে হয়েছে যে, এই গ্রুপের ওই ক্ষুধাটা আছে যে এখানে এসে ম্যাচ জিততে পারি, সিরিজ জিততে পারি।’ হাঁটুর চোটের কারণে এবারের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলা হচ্ছে না কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের। স্বাগতিকরা পেসার কাইল জেমিসনকেও পাচ্ছে না হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরির কারণে। নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে ২০ ওভারের সিরিজে দলের নেতৃত্ব দেবেন বোলিং অলরাউন্ডার মিচেল স্যান্টনার। অন্যদিকে বাংলাদেশ দলেও আসছেন পরিবর্তন। এরই মধ্যে মুশফিকুর রহীম ও রাকিবুল হাসান দেশে ফিরেছেন।
গেল ১৬ই ডিসেম্বর সেখানে যোগ দিয়েছেন রনি তালুকদার, শামীম হোসেন পাটোয়ারি, শেখ মেদেহী হাসান ও তানভীর ইসলাম। বাংলাদেশ দল সবশেষ আন্তর্জাতিক টি-টেয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে চীনে আয়োজিত এশিয়ান গেমসে। তবে সেটি জাতীয় দল ছিল না। সেই হিসেব করলে জুলাইয়ে সিলেটে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচকে জাতীয় দলের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি বলা যেতে পারে। এর মধ্যে ওয়ানডে বিশ্বকাপ নিয়েই ব্যস্ত ছিল দল। এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে ২০২৪ এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মহড়া শুরু করবে টাইগাররা। আগামী বছর জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ যৌথভাবে আয়োজন করবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
thanks