আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রুশ-ইউক্রেন লাগল, তার ওপর স্যাংশন, পরিবহন-পরিচালন খরচ, জিনিসের দাম বাড়ল। এ অবস্থায় জিনিসের দাম আরও বাড়বে। এরমধ্যে আমেরিকা হুতিদের আক্রমণ করল। এটা যখন শুরু হয়ে গেল তখন তো অর্থনীতিতে আরেকটা ধাক্কা আসবেই।
আজ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত নির্বাচন পরবর্তী শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দ্রুত সরকার গঠন করা হয়েছে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য। বিএনপির নেতৃত্ব না থাকায় নির্বাচনে অংশ নেয়নি, কিন্তু ভোট বানচাল করতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এখন মূল কাজ হচ্ছে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা এবং জিনিসপত্রের দাম যা বেড়েছে তা নিয়ন্ত্রণ করা। গ্রামে-গঞ্জে তেমন অসুবিধা নেই, ঢাকা শহরে একটু সমস্যা, মানুষের কষ্ট হচ্ছে, সেখানে জীবনযাত্রার মান একটু বেশি। বাজারে কিন্তু পণ্যের ঘাটতি নেই। কিন্তু মনে হয় যে, কেউ জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে মানুষকে হয়রানি করে।
আমাদের সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমার বেশি আকক্সক্ষা নেই। আমি টুঙ্গিপাড়া আসবো আর ভ্যানে করে ঘুরে বেড়াবো। আমার গাড়িও লাগবে না। এক এক বাড়ি যাব আর খেয়ে বেড়াবো। এ জন্য ঢাকা শহরে আমার কোনো বাড়ি ঘর নেই। আমার যা আছে টুঙ্গিপাড়ায়। কাজেই আমি এখানে থাকবো। আমি আর রেহানা (শেখ রেহানা) এটাই ঠিক করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ষড়যন্ত্র চক্রান্ত মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সে দোয়া করবেন আপনারা। জাতির পিতার ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়া। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। এখন আমাদের টার্গেট স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া। কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না এবং কোনো মানুষ যেন না খেয়ে থাকে।
এর আগে টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নবগঠিত মন্ত্রিসভা। এ সময় তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। পরে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের নিয়ে আরও একবার বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনায় সুরা ফাতেহা পাঠ এবং বিশেষ মোনাজাতে যোগ দেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নিজ বাস ভবনে নবগঠিত মন্ত্রিসভার সঙ্গে অনানুষ্ঠনিক বৈঠকে বসেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি আসন্ন পবিত্র রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, পবিত্র রমজান ঘনিয়ে আসছে, তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। কারণ এই মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ানো উচিত নয়। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, এটি একটি অনানুষ্ঠানিক মন্ত্রিসভার বৈঠক ছিল। প্রধানমন্ত্রী রমজানের সময় বিশেষ করে বড় মজুদদাররা যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির জন্য জরুরি পণ্য মজুত করতে না পারে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন। মন্ত্রীদের এই বিষয়ে নিয়মিত মজুতবিরোধী অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখুন যাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকতে পারে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের প্রথমে তাদের মন্ত্রণালয়ের সার্বিক বিষয়ে তথ্য জানার জন্য নির্দেশ দেন। সালাউদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ও জনগণের জন্য কল্যাণকর যে কোনো প্রকল্প গ্রহণের সময় মন্ত্রীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন।