সর্বশেষ
Home » রাজনীতি » নির্বাচন » এই ভোটেও হারলেন যারা

এই ভোটেও হারলেন যারা

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্লাহ ফরিদপুর-৪ আসনে টানা তিন মেয়াদে নৌকা পেলেও একবারও জিততে পারেননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাকে টানা তিনবার পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। গতকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণায় দেখা যায়, ঈগল প্রতীক নিয়ে নিক্সন চৌধুরী পেয়েছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী জাফরউল্লাহ নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬ ভোট। ২৩ হাজার ৯৬৯ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন নিক্সন চৌধুরী। কাজী জাফরউল্লাহর হ্যাটট্রিক পরাজয় ও নিক্সন চৌধুরীর হ্যাটট্রিক জয় হয়েছে। শুধু কাজী জাফরউল্লাহই নন, এমন অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন এবারের ভোটে। যদিও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ তাদের সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল ভোটে অংশ নেয়নি।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। কুষ্টিয়া-২ আসনে টানা তিনবারের এমপি ইনু এবার ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট। এদিকে আসনটিতে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন কামরুল আরেফিন। কামরুল আরেফিন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান।

পিরোজপুর-২ আসনে নিজের সাবেক এপিএস ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের কাছে হেরে গেছেন নৌকা নিয়ে নির্বাচন করা জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান ও বর্তমান এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। মহিউদ্দিন মহারাজ ঈগল প্রতীক নিয়ে ৯৯ হাজার ৭২৪ ভোট পেয়েছেন। আর নৌকা নিয়ে নির্বাচন করা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পেয়েছেন ৭০ হাজার ৩৩৩ ভোট। মঞ্জুর বাড়ি পিরোজপুর-২ আসনের ভান্ডারিয়ায়। মহিউদ্দিন মহারাজ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রশাসক ছিলেন।
হবিগঞ্জ-৪ আসনে বর্তমান এমপি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। স্থানীয়ভাবে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সুমন ১ লাখ ৯৮ হাজার ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দুবারের সংসদ সদস্য মাহবুব আলী পেয়েছেন ৪৭ হাজার ভোট।

মাদারীপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম ৯৬ হাজার ৩৩৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের আবদুস সোবহান গোলাপ পেয়েছেন ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট। আবদুস সোবহান গোলাপ দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং বর্তমান একাদশ সংসদের এমপি। বিজয়ী তাহমিনা বেগম একাদশ সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য।

রাজশাহী-২ নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা পেলেও তিনি বিজয়ী হতে পারেননি। তাকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা। শফিকুর রহমান বাদশা কাঁচি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৯০৬ ভোট। এ আসনের বর্তমান এমপি ফজলে হোসেন বাদশা পেয়েছেন ৩১ হাজার ৪৬৬ ভোট। ময়মনসিংহ-১ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে ৯৩ হাজার ৫৩১ ভোট পেয়ে বেসরকারি ফলাফলে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন মাহমুদুল হক সায়েম। তিনি নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি জুয়েল আরেংকে ১৯ হাজার ৬৭৯ ভোটের ব্যবধানের পরাজিত করেন। টাঙ্গাইল-৮ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অনুপম শাহজাহান ৯৬ হাজার ৪০১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৫০১ ভোট। নেত্রকোনা-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন বর্তমান এমপি ও আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীক নিয়ে ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু ৮৪ হাজার ৬৭৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। অসীম কুমার উকিল পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৪১ ভোট। কুষ্টিয়া-৪ আসনে বড় ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি সেলিম আলতাফ জর্জ। জর্জ নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৮০ হাজার ১১১ ভোট। অধিকাংশ কেন্দ্রেই ফল বিপর্যয় হয়েছে তার। ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে ৯৮ হাজার ৪১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক এমপি আবদুর রউফ। ১৭ হাজার ৯৩০ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন সেলিম আলতাফ জর্জ।

মানিকগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর কাছে হেরে গেছেন তিনবারের এমপি কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। এ আসনে মোট ১৯৩টি ভোট কেন্দ্রে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু পেয়েছেন ৮৮ হাজার ৩০৯ ভোট। অন্যদিকে নৌকা প্রতীকে মমতাজ বেগম পেয়েছেন ৮২ হাজার ১৩৮ ভোট।

গাইবান্ধা-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুবারের এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে হারিয়ে জয়ের মুখ দেখেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লা নাহিদ নিগার। বেসরকারি ফলাফলে ঢেঁকি প্রতীকে নাহিদ নিগার পেয়েছেন ৬৬ হাজার ৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙল প্রতীকে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী পেয়েছেন ৪৩ হাজার ৪৯১ ভোট। গাজীপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিকে হারিয়ে জিতেছেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়ামী লীগ নেতা আখতারউজ্জামান। প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী, ট্রাক প্রতীকের ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারউজ্জামান পেয়েছেন ৬১ হাজার ৬৯৭ ভোট। অন্যদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকি পেয়েছেন ৫০ হাজার ৬৯৬ ভোট।

রংপুর-১ আসনে হেরে গেছেন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) মসিউর রহমান রাঙ্গা। তাকে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (কেটলী প্রতীক) এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বাবলু।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন কুমিল্লা-২ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিমা আহমাদ মেরি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকে অধ্যাপক আবদুল মজিদের কাছে পরাজিত হন। কুমিল্লা-৩ আসনের বর্তমান এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন হেরে গেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সরকারের কাছে। কুমিল্লা-৪ আসনের বর্তমান এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল হেরে গেছেন দেবিদ্বারের সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের কাছে।

রংপুর-৫ আসনে বিজয়ী হয়েছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার। জাকির হোসেন সরকারের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান রাশেক (রাশেক রহমান)। ১৫০ কেন্দ্রে আশিকুর রহমান রাশেক নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৫৯০ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৭০৯ ভোট। বিপুল ভোটে জাকির হোসেন সরকার বিজয়ী হওয়ার পরও ফলাফল ঘোষণা দিতে দেরি করায় একপর্যায়ে সমর্থকরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

ঢাকা-১৯ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ৮৪ হাজার ৪১২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ পেয়েছেন ৭৬ হাজার ২০২ ভোট। ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলামের কাছে হেরেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এবং সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ। ঢাকা-১৯ আসনের ২৯২ কেন্দ্রে ফলাফল অনুযায়ী ভোটার বহুল ধামসোনা ইউনিয়নের সাতবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৪১২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ পেয়েছেন ৭৬ হাজার ২০২ ভোট। বর্তমান সংসদ সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৩৬১ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন।

বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব কুলা প্রতীকের মাহি বি চৌধুরী পরাজিত হয়েছেন। মুন্সীগঞ্জ-১ আসন হতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে এমপি হয়েছিলেন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নিজ দলীয় প্রতীক কুলা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে নৌকা প্রতীকের মহিউদ্দিন আহমেদের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। মোট ১৭০টি ভোট কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত ভোটে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ ১ লাখ ২ হাজার ৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার কবির ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৬১ হাজার ৯৮০ ভোট। আর মাহি বি চৌধুরী পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯৩৩ ভোট।
সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *