আজ ১৩ই জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে ভোট দেবেন তাইওয়ানের সাধারণ জনগণ। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সঙ্গে দ্বীপটির উত্তেজনা যে কোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান প্রণালীতে ব্যাপক সামরিক আনাগোনা বাড়িয়েছে বেইজিং। এরইমধ্যে নিজেদের ভবিষ্যত নেতা নির্বাচন করতে যাচ্ছেন তাইওয়ানের মানুষ।
বর্তমানে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন দ্বীপটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। তিনি ২০১৬ এবং ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এখন তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন কাউকে বেছে নিচ্ছেন তাইওয়ানের জনগণ। সাই ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) সদস্য। দলটিকে অপছন্দ করে চীন। এই দল তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষে সবথেকে বেশি সক্রিয়। উল্টো দিকে চীন তাইওয়ানকে নিজের একটি অংশ হিসেবে দেখে।
তবে দুই মেয়াদে জয়ী হওয়ায় আইনত তিনি আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন না।
ভোটাররা তিন প্রার্থীর মধ্য থেকে তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন। এছাড়া বিলিয়নেয়ার টেরি গৌ শেষ সময়ে এসে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। তিনি অ্যাপলের প্রধান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফক্সকনের প্রতিষ্ঠাতা। নির্বাচনে আছে বর্তমানের বিরোধী দল কেএমটি। তারা ১৯৪৯ সালে চীনের কমিউনিস্টদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধে হেরে পালিয়ে তাইওয়ান দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছিল। তারা প্রায় ৪০ বছর ধরে তাইওয়ানে কঠোর হাতে শাসন করে। এছাড়া আরও আছে তাইওয়ান পিপলস পার্টি বা টিপিপি। তারা একটি মধ্যপন্থী দল। ২০১৯ সালে এ দল প্রতিষ্ঠিত হয়।
তাইওয়ানে এসে সরকার গঠনের পর কয়েক দশক ধরে কঠিন হাতে দেশ শাসন করে কেএমটি। এসময় দেশে জারি ছিল মার্শাল ল। শেষে ১৯৯৬ সালে প্রথম সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দ্বীপটিতে৷ তারপর থেকে শুধুমাত্র দুটি প্রধান দল কেএমটি ও ডিপিপি নির্বাচন করে আসছে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়ী হয় এবং প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ দুই বার ক্ষমতায় বসতে পারবেন। শনিবারের নির্বাচনে কোন দল জিতবে তা এখনই ধারণা করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে অষ্টমবারের জন্য নিজেদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে তাইওয়ানের মানুষ।
এই নির্বাচনে মন সময় হচ্ছে যখন তাইওয়ানকে ঘিরে ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন। কেউ কেউ ধারণা করছেন হয়ত নিজেদের এই দ্বীপ ফিরিয়ে নিতে যুদ্ধও শুরু করতে পারে দেশটি। অপরদিকে তাইওয়ান নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েনও নতুন মাত্রায় প্রবেশ করেছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো বলছে, দ্বীপটির জনগণ নতুন নেতা নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবেন তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক চীনের সঙ্গে কেমন হবে। তাদের এ সিদ্ধান্ত এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাইরেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা হচ্ছেন, তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট লাই চিং তে, কেএমটি পার্টির হো ইয়ু ইহ এবং তাইওয়ান পিপলস পার্টির (টিপিপি) কো ওয়েন–জে। হো ইয়ু ছিলেন নিউ তাইপে সিটির জনপ্রিয় মেয়র এবং সাবেক পুলিশপ্রধান। দেশটির বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিপক্ষে। আর টিপিপির কো ওয়েন ছিলেন তাইপের সাবেক মেয়র। ২০১৯ সালে তিনি দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। যেসব ভোটার বড় দুটি রাজনৈতিক দলের ভূমিকায় বিরক্ত এবং নতুন কিছু চান, তাদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন কো–ওয়েন। তবে চীন ইস্যুতে ডিপিপি এবং কেএমটির তুলনায় তার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। কারণ, তিনি চীনকে প্রতিরোধও করতে চান আবার চীনের সঙ্গে যোগাযোগও বাড়াতে চান।