সরকারের গতিবিধি লক্ষ্য করে এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করবে বিএনপি ও সমমনাদলগুলো। ইতিমধ্যে কর্মসূচি ঠিক করতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল এবং জোটগুলোর সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠকও করছে দলটি। সামনে আরও বৈঠক হবে। এরপরে কর্মসূচি ঠিক করা হবে। এসব বৈঠকে চলমান আন্দোলনের ত্রুটি বা ঘাটতি এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি দলকে যার যার অবস্থান থেকে কর্মসূচি পালনেরও নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি’র হাই-কমান্ড।
এই আন্দোলনকে সফল করতে ডান-বাম মিলে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে আন্দোলনের কথা বলছে বিএনপি ও সমমনাদলগুলো। তবে এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কারণ অনেকে আবার যুগপৎ আন্দোলনের জোটকে সম্প্রসারিত করার পরামর্শ দিয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছে, যার যার অবস্থান থেকে যেভাবে আন্দোলন হচ্ছে সেভাবেই হোক। সামনে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে।
কারণ জামায়াত অভিযোগ করেছে যে, গত দুই মাসের আন্দোলনে বিএনপি তাদের সেভাবে সমন্বয় করেনি।
বিএনপি’র একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮শে অক্টোবরের পর থেকে সরকার পতনের যে আন্দোলন হয়েছে তার ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সামনের কর্মসূচির জন্য নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে নতুন কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কারাবন্দি নেতাকর্মীদের কারামুক্তির বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গত ৭ই জানুয়ারি নির্বাচনের নাটকই শুধু প্রত্যাখ্যান করেনি, এই একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকারকেও পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছে এবং বাংলাদেশের সকল গণতন্ত্রকামী দলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেশের জনগণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাজপথে তাদের শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।
তবে এবার আন্দোলনের ধারা পরিবর্তন করতে চাচ্ছে বিএনপি। দলটি ৭ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগে এক ধারায় আন্দোলন করেছে, এবার ভিন্ন ধারায় আন্দোলন করতে চাচ্ছে। কিন্তু আন্দোলনের এই ধারা কী হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এই কর্মসূচি নির্ধারণে দলটির শীর্ষ নেতারা প্রতিনিয়তই বৈঠক করছেন। পরবর্তীতে যুগপৎ আন্দোলনে দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধারা ও কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে বলে জানা গেছে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের নেতৃবৃন্দ প্রতিদিনই বৈঠক করছেন। কর্মসূচি ঠিক করে তারা জানাবেন। আর আমরা কি আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি? আমরা কর্মসূচি ও আন্দোলনের মধ্যে আছি। আন্দোলনে আমাদের নতুন কর্মসূচি প্রণয়ন, আবার নতুন কী কর্মসূচি আসবে, ৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত এক ধারায় হয়েছে, এখন আমরা কোন ধারায় আন্দোলনে যাবো, আমাদের সঙ্গে আরও যেসব দল রয়েছে- তাদের সঙ্গে কথা বলার বিষয় আছে। কথা বলার পরে একটা কর্মসূচি ঠিক হয়। সেভাবেই আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচিতে যাচ্ছি।
এদিকে গত কয়েকদিনে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ (নুরুল হক নুর), গণফোরাম ও পিপল্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং গণঅধিকার পরিষদের (কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসব বৈঠকে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়েই মূলত আলোচনা হয় এবং কর্মসূচির বিষয়ে প্রতিটি দলই তাদের মতামত জানিয়েছে। এখন বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনার মধ্য দিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
যুগপৎ আন্দোলনের একজন শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে বলেন, বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ডান-বাম মিলে এক প্ল্যাটফর্মে আন্দোলন করার উপর জোর দেয়া হয়েছে। এই আন্দোলনকে চাঙ্গা করতে সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেসব বিষয়েও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে আন্দোলনের মূল চ্যালেঞ্জটাই ধরা হয়েছে, নেতাকর্মীদেরকে পুনরায় উজ্জীবিত করে কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করে রাজপথে নামানো।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দায় মানবজমিনকে বলেন, সরকার পতনের আন্দোলন শেষ হয়নি। এটা চলছে। সামনে দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।