সর্বশেষ
Home » বিশ্ব » বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা বাড়ছে জনগণের কথা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দিল্লিকে – সার্চ অফ মিস্টেরি

বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা বাড়ছে জনগণের কথা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দিল্লিকে – সার্চ অফ মিস্টেরি

অদ্ভুত সব কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বেশ খারাপ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে ভারতের একরকম সম্পর্ক আছে। কিন্তু ভারত এই সম্পর্ক নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণকে বিবেচনায় রাখে না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো বাংলাদেশ।
সম্প্রতি ইউটিউব ভিত্তিক চ্যানেল ‘সার্চ অফ মিস্টেরি’তে ‘হোয়াই এন্টি-ইন্ডিয়া সেন্টিমেন্ট ইজ গ্রোয়িং ইন মালদ্বীপ, বাংলাদেশ অ্যান্ড নেপাল?’ শীর্ষক প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশের শুরুতে এমন মন্তব্য করে বলা হয়েছে:
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দিল্লির গভীর সম্পর্ক দেশটির জনগণের জন্য খুবই বিরক্তিকর। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করলে এর প্রভাব আরও বেশি স্পষ্ট হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের হারের পর ঢাকা শহরে যেভাবে উদ্‌যাপন হয়েছে তা উদ্বেগের কারণ। এ ঘটনা নিয়ে দুই দেশে আলোচনার পারদ চড়ে। বিভিন্ন কারণে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের হয়রানি করার ঘটনাও ঘটেছে।
হ্যাঁ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই আলোচনায় অপ্রয়োজনীয় রঙ যোগ করেছে। কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব প্রবল থেকে প্রবলতর হয়েছে।
এটা বলাই ভালো যে, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যে ভারতবিরোধী মনোভাব গড়ে উঠেছে তা ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে নয়। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের বিশ্লেষকরাও মনে করেন, ভারত সরকারের কিছু কিছু নীতি এই মনোভাবকে প্রবল মাত্রায় ইন্ধন দিয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির কথাই ধরা যাক।
আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব থাকতে পারে। কিন্তু সেই প্রভাব যদি জনগণের সার্বভৌম অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে তাহলে জনগণের মধ্যে তার প্রভাব পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
গত ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল আরেকটি একদলীয় নির্বাচন যখন বিরোধী দল কারাগারে বন্দি ছিল। ভারত গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিস্তার করেছে। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, নিজেদের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষমতা এখন আর বাংলাদেশের নাগরিকদের হাতে নেই।
এই ধরনের ধারণা আরও জোরদার হয় যখন এক বাংলাদেশি মন্ত্রীকে প্রকাশ্যে বলতে শোনা যায়, যেকোনো মূল্যে হাসিনা সরকারের টিকে থাকা নিশ্চিত করার জন্য তিনি ভারতকে অনুরোধ করেছেন এবং ভারত তার অনুরোধটি আমলে নিয়েছে।
বাংলাদেশি বিশ্লেষকরা দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন এবং বলছেন যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ভারতের পক্ষে একতরফা হয়ে গেছে।
শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারত তার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহ দমন, বাংলাদেশে ট্রানজিট সুবিধা, বঙ্গোপসাগরের দুটি প্রধান বন্দরে স্থায়ী প্রবেশাধিকার, জ্বালানি চুক্তি, বঙ্গোপসাগরে নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন করেছে।
বিপরীতে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বাংলাদেশের অনুরোধ কয়েক দশক ধরে বারবার উপেক্ষা করা হয়েছে। সামপ্রতিক বছরগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সবচেয়ে সহিংস সীমান্তে পরিণত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কয়েক বছর ধরে ভারতের পক্ষে বিস্তৃত হয়েছে।
এমনকি রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটেও ভারতের কাছ থেকে খুব একটা সহযোগিতা পায়নি বাংলাদেশ। এসব যৌক্তিক কারণে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব আগের চেয়ে বেড়েছে।
ভারত সরকারের ভুল নীতির কারণে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। অনেকের মতে ভারতের একতরফা সমর্থনে বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আরেকটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি প্রবেশ করেছে যখন দেশটি রাজনৈতিকভাবে অচলাবস্থার দিকে যাচ্ছে।
কোন দেশে সাম্রাজ্যবাদ প্রবেশ করবে এবং কোন দেশে করবে না সেটি সম্পূর্ণভাবে একটি দেশের মৌলিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর নির্ভর করে। বর্তমান প্রেক্ষাপট পরীক্ষা করলে দেখা যায় যে, এই তিনটি ভিত্তিই এখন শূন্য।
স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্র এই সুযোগ ব্যবহার করছে। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলতেন বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রাজত্ব শেষ এবং সেটা ফিরে আসার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু বাস্তবে কি হয়েছিল? আমরা কি এখন দেখতে পাচ্ছি না যে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ফিরে এসেছে?
ভারত পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে মার্কিন হস্তক্ষেপের এই প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত করেছে। ভারত বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ এবং বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী। স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশটি বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির দিক থেকে দুই দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতির জন্য দুই দেশের রাজনীতিবিদরা যেমন দায়ী, তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রোপাগান্ডাও সমানভাবে দায়ী।
১৯৪৮ সাল থেকে সত্য, মিথ্যা এবং গুজবের সমন্বয়ে বাংলাদেশের জনমতের মধ্যে ভারত সম্পর্কে একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব সাবধানে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে ভারতের একটি বড় দায়িত্ব রয়েছে।
এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সমপ্রীতি ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের জনগণের স্পন্দন বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভারতের চারপাশের অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *