নাইজেরিয়ান নাগরিক ডন ফ্রাঙ্কি ওরফে জ্যাকব ফ্রাঙ্কি। বাংলাদেশে নাইজেরিয়ান কমিউনিটির প্রেসিডেন্টও তিনি। গত ৯ বছর ধরে বাংলাদেশে থাকলেও ৯ মাস আগেই তিনি দেশ ছেড়েছেন। এদেশে থাকাকালীন তৈরি পোশাক শিল্পের বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা শুরু করেন ফ্রাঙ্কি। ব্যবসার আড়ালে গড়ে তোলেন আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের বিশাল চক্র। বর্তমানে নাইজেরিয়ায় বসেই বিভিন্ন দেশের মাদক বহনকারীদের সমন্বয় করেন এই বিগ বস খ্যাত মাদক সম্রাট।
বর্তমানে ডন ফ্রাঙ্কি তার বাংলাদেশি সহযোগী সাইফুল ইসলাম রনির (৩৪) মাধ্যমে এদেশে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। রনিও গার্মেন্ট শিল্পের বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে মাদক পাচারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। রনি মূলত মাদক বহনকারীদের এদেশে প্রবেশের প্রয়োজনীয় ইনভাইটেশন, হোটেল বুকিং ও ভিসা পাওয়ার কার্যক্রমে সহযোগিতা করতেন। ম্যাসপেক্স লিমিটেড নামের কথিত একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে এই আমন্ত্রণপত্র ইস্যু করতেন তিনি। আর ফ্রাঙ্কির ভাই উইসলি ও তাদের ম্যানেজার আসাদুজ্জামান আপেল রনির বাসায় থেকে এই মাদক ব্যবসা দেখাশোনা করতেন।
বাংলাদেশে কোকেনের চালান প্রবেশের পরে পুনঃপ্যাকেজিং, নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তার দায়িত্ব ছিল উইসলির। এই চক্রের আরেক সদস্য ক্যামেরুনের নাগরিক কেলভিন ইয়েং। কেলভিন গত ২০শে জানুয়ারি আরেক বিদেশি নাগরিক মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তার কাজ ছিল বাংলাদেশে বসে মাদকের দেশি-বিদেশি সদস্যদের সমন্বয় করা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মহাপরিচালক মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী এসব তথ্য তুলে ধরেন।
মুস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, গত ২৪শে জানুয়ারি রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন থেকে মালাউয়ের নাগরিককে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর ২৫শে জানুয়ারি রাতে ২শ’ গ্রাম কোকেনসহ তানজানিয়ার অপর এক নাগরিককে গ্রেপ্তার করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এরপরই দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক কোকেন উদ্ধারের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তে মাঠে নামে ডিএনসি। ৪ দিনের ধারাবাহিক অভিযানে দুই বাংলাদেশিসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই বেরিয়ে আসে দেশে গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের তথ্য। ডিএনসি’র মহাপরিচালক বলেন, মালাউয়ের নাগরিক ও তানজানিয়ার নাগরিককে গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ, ডিজিটাল ডিভাইস ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কোকেন চোরাচালান চক্রের অন্য সদস্যসহ মূলহোতা ডন ফ্রাঙ্কি নামের এক নাইজেরিয়ান নাগরিকের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ক্যামেরুনের নাগরিক কেলভিন ইয়েংকে গ্রেপ্তার করা হয়। শাহজালাল বিবানবন্দরে কোকেনসহ মালাউয়ের নাগরিক গ্রেপ্তারের খবরে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কেলভিন।
এদিকে বিগ বস ফ্রাঙ্কির অফিসে অভিযান চালিয়ে বারিধারার একটি বাসা থেকে কোকেন চোরাচালান সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং কোকেন পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন লাগেজ পাওয়া গেছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও বাড়ির মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ফ্রাঙ্কি দীর্ঘ ৯ মাস আগে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছে। বর্তমানে ফ্রাঙ্কির ভাই উইসলি ও তাদের ম্যানেজার আসাদুজ্জামান আপেল ও রনি ওই বাসায় থেকে ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। কোকেন চালান আটকের সংবাদ পেয়ে ফ্রাঙ্কির ভাই উইসলি কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন। আর আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন রনি, আপেলসহ চক্রের বাকি সদস্যরা। পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে আপেল ও রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। রনির মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য প্রযুক্তির ডিভাইস বিশ্লেষণ করে একাধিক ভুয়া ইনভাইটেশন লেটার পাঠানো ও চক্রের মূলহোতা ফ্রাঙ্কির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ফ্রাঙ্কির অফিস থেকে কোকেন চোরাচালান সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং কোকেন পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন লাগেজ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আপেলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ননসো ইজিমা পেটার ওরফে অস্কার (৩০) ও নুডেল ইবুকা স্টানলি ওরফে পডস্কি (৩১)কে গ্রেপ্তার করে ডিএনসি।