সর্বশেষ
Home » অর্থনীতি » রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমালো সরকার

রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমালো সরকার

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৩টি পণ্য ও খাতকে রপ্তানির বিপরীতে ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা দেয়া হবে। তবে এসব পণ্যের রপ্তা‌নি‌তে নগদ সহায়তা কমিয়েছে সরকার। খাতভেদে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত এ সহায়তা কম পাবেন রপ্তা‌নিকারকরা। গত অর্থবছরে ১ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে এ নগদ সহায়তা পেয়েছিলেন রপ্তানিকারকরা। আর এবছর জুন পর্যন্ত রপ্তানিকারকরা সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নির্দেশনাটি দেশের সব বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের অনুমোদিত ডিলারদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, সরকার থেকে হঠাৎ করে নেয়া এমন সিদ্ধান্তে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অবশ্য সরকার এখন চরম সংকটে আছে। যে কারণে বিভিন্ন খাতের প্রণোদনা ও সরকারের কাছে পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। শুধু সার, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের কাছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনা রয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর পাওনা ২৫ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে সরকার বন্ড ইস্যু করছে।
এখন ভর্তুকির চাপ কমাতে রপ্তানিতে প্রণোদনা কমানো হলো।
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতির মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানির সহায়তা কমানো হয়েছে এটার চেয়ে বড় সমস্যা কয়েকটি ক্যাটাগরির পণ্য সহায়তা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তার মানে টি-শার্টসহ রপ্তানির বড় সব পণ্যে সুবিধা থাকছে না। সরকার দেশ কিভাবে চালাবে এটা তাদের বিষয়। আমাদের কোনো কথার মূল্য নেই। কোথায়ও বলার জায়গাও নেই।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকার চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৩টি খাতে রপ্তানির বিপরীতে
রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা প্রদান করছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধান অনুসারে বিষয়টি রপ্তানি নির্ভর সাবসিডি হিসেবে বিবেচিত হয় এবং চুক্তি অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হলে কোনো রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা প্রদান করা যাবে না। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। এরূপ উত্তরণ পরবর্তী সময়ে রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা সম্পূর্ণভাবে একত্রে প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। এসব বিবেচনায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন খাতে নগদ সহায়তার হার অল্প অল্প করে হ্রাসের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ৪৩টি পণ্য রপ্তানির বিপরীতে প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা পাবে। আগের বছরও এই ৪৩টি পণ্য সহায়তা পেয়েছে। এসব পণ্যের বিপরীতে ০.৫০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যেখানে আগের বছরে রপ্তানিকারকরা সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত সহায়তা পেতেন।

পণ্যগুলোর মধ্যে কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, বৈচিত্রকৃত পাট, আলু এবং হালাল মাংস রপ্তানিতে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ সহায়তা পাওয়া যাবে। এছাড়া রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্রখাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে ৩ শতাংশ, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের (নিট, ওভেন ও সোয়েটার) ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ৪ শতাংশ, নতুন পণ্য, নতুন বাজারে (বস্ত্র খাত) ৩ শতাংশ তবে ইউরো অঞ্চলে বস্ত্রখাতের রপ্তানিকারকদের জন্য বিদ্যমান ৩ শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা ১ শতাংশ, তৈরি পোশাক খাতে বিশেষ নগদ সহায়তা দশমিক ৫০ শতাংশ, পাটজাত চূড়ান্ত দ্রব্যে ৭ শতাংশ, পাটসুতায় ৫ শতাংশ এবং চামড়াজাত দ্রব্যাদি রপ্তানিতে ১২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হবে।

অন্য পণ্যগুলোর মধ্যে হাতে তৈরি পণ্যে ৮ শতাংশ, গরু-মহিষের নারী ভুড়ি, শিং ও রগে ৮ শতাংশ, হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানি খাতে ২ থেকে ৯ শতাংশ, হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে ১২ শতাংশ, কারখানাগুলোতে উৎপাদিত ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার রপ্তানিতে ৭ শতাংশ, পেট বোতল-ফ্লেক্স রপ্তানিতে ৮ শতাংশ, পেট বোতল-ফ্লেক্স থেকে উৎপাদিত পলইয়েস্টার স্টাপল ফাইবার রপ্তানিতে ৮ শতাংশ, জাহাজ রপ্তানির বিপরীতে ৮ শতাংশ, পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত কার্বন ও জুট পার্টিকেল বোর্ড রপ্তানিতে ১০ শতাংশ, শস্য ও শাক সবজির বীজ রপ্তানিতে ১০ শতাংশ, ফার্নিচার রপ্তানিতে ১০ শতাংশ, প্লাস্টিক দ্রব্য রপ্তানিতে ৮ শতাংশ, দেশে উৎপাদিত কাগজ ও কাগজ জাতীয় দ্রব্য রপ্তানিতে ৭ শতাংশ এবং আগর ও আতর রপ্তানিতে ১০ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন রপ্তানিকারকরা।

এছাড়া ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্যে ৮ শতাংশ, অ্যাকুমুলেটর ব্যাটারিতে ১২ শতাংশ, সফটওয়্যার, আইটিইএস ও হার্ডওয়্যার রপ্তানিতে ৮ শতাংশ, সফটওয়্যার ও আইটিইএস সেবা রপ্তানিতে ব্যক্তি পর্যায়ের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ৩ শতাংশ, মোটরসাইকেল রপ্তানিতে ৮ শতাংশ, রেজার ও রেজার ব্লেড রপ্তানিতে ৮ শতাংশ, সিরামিক পণ্য রপ্তানিতে ৮ শতাংশ, টুপরি রপ্তানিতে ৯ শতাংশ, কাকড়া ও কুঁচে রপ্তানিতে ৮ শতাংশ, কেমিক্যাল পণ্য (ক্লোরিন, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, কস্টিক সোডা এবং হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড) রপ্তানিতে ৭ শতাংশ, কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য রপ্তানিতে ৮ শতাংশ, চাল রপ্তানিতে ৫ শতাংশ, চা রপ্তানিতে ৩ শতাংশ, স্টিল রপ্তানিতে ৩ শতাংশ, বাইসাইকেল ও এর পার্টস রপ্তানিতে ৩.৫০ শতাংশ, সিমেন্ট সিট রপ্তানিতে ৩.৫০ শতাংশ, বেজা, বেপজা ও হাইটেক পার্ক এ অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে রপ্তানিতে দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *