সর্বশেষ
Home » অন্যান্য » ভাইরাল হতে ৫ লাখ টাকার বাইকে আগুন, আয় ২০০ ডলার

ভাইরাল হতে ৫ লাখ টাকার বাইকে আগুন, আয় ২০০ ডলার

রাজধানীর বাড্ডায় আফতাব নগর হাউজিং এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে ‘অন্যায়ভাবে মামলা দিয়েছে’ অভিযোগ তুলে নিজের ৫ লাখ টাকার বাইক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন রাসেল ওরফে জুনিয়র টাইগার শ্রফ নামে এক তরুণ। এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তিনি সামাজিক মাধ্যমে পোস্টও দেন। সেখান থেকে আয় করেন মাত্র ২০০ ডলার। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে, ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে ‘ভাইরাল হিরো’ হতে রাসেল এমন কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

ডিবি দাবি করেছে, রাসেলের বিরুদ্ধে মামলা করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং তার এক বন্ধু ট্রাফিক আইন ভাঙায় তাকে মামলা করা হয়। রাসেল সেই মামলার স্লিপ দেখিয়ে নিজের পাঁচ লাখ টাকা দামের বাইকে আগুন দেন। সেটি ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে আয় করেন মাত্র ২০০ ডলার। রোববার বিকেলে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বাইকারের ভিডিও দেখতে পাই। তাদের মধ্যে ছেলে-মেয়ে উভয়ই মূলত ইউটিউবার।

তারা একটা গ্রুপ নিয়ে নিয়মিত দ্রুত গতিতে বাইক চালায়। এমনই একজন রাসেল নিজেকে জুনিয়র টাইগার পরিচয় দিতেন। সম্প্রতি রাসেল তার পাঁচ লাখ টাকা দামের একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন। পরে আমরা তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, তিনি ভিডিওতে যে মামলার তথ্য দিয়েছে আসলে এমন কোনো ঘটনা তার সঙ্গে ঘটেনি। ফুয়াদ নামে তার এক বন্ধুর মামলার কপি দেখান তিনি। বিপজ্জনকভাবে মোটরসাইকেল চালানো, সিগন্যাল অমান্য করা এবং অবৈধ উচ্চ শব্দের যন্ত্র সংযোজনের দায়ে ফুয়াদকে মামলা দেওয়া হয়েছিল।
হারুন বলেন, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর এলাকার প্রবাসী বাবা-মায়ের সন্তান রাসেল মিয়া। যিনি নিজেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাসেল ওরফে জুনিয়র টাইগার শ্রফ পরিচয় দিত। এই নামে তিনি ফেসবুক ও ইউটিউবে অন্যের বানানো নানা ধরনের কনটেন্ট পোস্ট করত যার অধিকাংশই অর্থহীন, অশালীন ও দেশের আইন বিরোধী। রাসেলকে ‘বখে যাওয়া তরুণ’ মন্তব্য করে হারুন আরও বলেন, তিনি ২০২০ সালে এইচএসসি পাশ করার পরে আর পড়াশোনা করেনি। মাঝে কিছু সময় ইন্ডিয়ায় মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে জুনিয়র টাইগার শ্রফ পরিচয় দিত। সে মোটরসাইকেল স্পিডিং স্টান্ডিংসহ বিভিন্ন ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে ছাড়ত। এতে তার সামান্য আয় হতো। আয় বাড়াতে বাইকে আগুন দেওয়ার কাজটি করে রাসেল। রাসেলকে গ্রেপ্তারের পর জানা যায় তারা বাবা-মা বিদেশে থাকে। রাসেল প্রতিদিন রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফিট রোড, মাওয়া আফতাব নগর এলাকায় বিকট শব্দের বাইক রেইস, হাই স্পিডিং, বাইক স্ট্যান্ট চালিয়ে আসছিল। তার আর কিছু ভিডিও মিলিয়ন ভিউ হলে সে জুয়ার সাইট প্রমোট করতে পারত। যদিও ইতোমধ্যে নিয়মিত জুয়ার সাইট প্রমোট করত রাসেল।

 

বাইকে আগুন দেওয়ার ঘটনার বিষয়ে হারুন বলেন, ঘটনার কয়েকদিন দিন আগে বাড্ডার আফতাব নগরে রাসেল তার বন্ধু ফুয়াদসহ কয়েকজন মিলে মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে একটি ভিডিও তৈরি করে। ভিডিওতে বাইক পোড়ানোর কারণ হিসেবে একটি কেস স্লিপ দেখিয়ে রাসেলকে বলতে দেখা যায়, ‘ট্রাফিক পুলিশ অন্যায়ভাবে তার মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার টাকার মামলা দেয়। এই অন্যায়ের মামলার প্রতিবাদ করতেই তার প্রিয় ও ভালোবাসার বাইকটিকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। ডিবি পুলিশ বলছে, প্রকৃতপক্ষে সেইদিন তাকে কোনো মামলায় দেয়নি ট্রাফিক পুলিশ। যে কেস স্লিপটি ভিডিওতে সে নিজের বলে দাবি করে সেটি ছিল তার বন্ধু ফুয়াদের। বিপজ্জনকভাবে মোটরসাইকেল চালানো, সিগন্যাল অমান্য করা এবং উচ্চ শব্দের সাইলেন্সার লাগানোর দায়ে তাকে মামলা দেওয়া হয়েছিল। প্রকৃত পক্ষে ভাইরাল হতে, মিথ্যা হিরোইজম দেখাতে গিয়ে এ কাজটি করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন রাসেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *