বর্তমানে ডলারের সংকট সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আমাদের দেশেও একই বাস্তবতা বিরাজ করছে। আর এই ডলারের ক্রাইসিসের কারণে গাড়ি ব্যবসা পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে সত্যিকার অর্থে চ্যালেঞ্জ কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আমরা আশাবাদী- যুদ্ধ ও ডলার ক্রাইসিসগুলো এক সময় সব ঠিক হয়ে যাবে। সবধরনের চ্যালেঞ্জের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিজেদের এগিয়ে নিতে হবে।
দেশের বাণিজ্যিক গাড়ির জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান নিটল মটরস লিমিটেড। আব্দুল মাতলুব আহমাদের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানটির হালচাল, পরিবহন সেক্টরের বর্তমান অবস্থা এবং আরও নানাবিধ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন নিটল মটরস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মাদ তানবীর শহীদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফাহিমা আক্তার সুমি…
প্রশ্ন: আপনাদের গাড়ি ব্যবসার শুরুর দিকটা একটু বলুন।
তানবীর শহীদ: আবদুল মাতলুব আহমাদ সম্পর্কে আপনারা সবাই কমবশি জানেন। তিনি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান। অর্থনীতিতে অক্সফোর্ড থেকে মাস্টার্স করেছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৮১ সালে তার হাত ধরে একটি ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে নিটল মটরস। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ভারতের টাটা মটরসের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশে বিক্রি শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে গ্রুপটির অটোমোবাইল, পেপার, ইলেকট্রনিক্স, মোটরসাইকেল, এন-ট্র?্যাক, কন্সট্রাক ইক্যুইপমেন্ট, ট্রেইলার, টায়ার এবং ইন্স্যুরেন্সসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি দেশে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছে। দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। ছোট্ট প্রতিষ্ঠানটিকে মাতলুব আহমাদ সম্পূর্ণ একক দক্ষতা, মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বৃহৎ গ্রুপে পরিণত করছেন তিনি।
প্রশ্ন:: বর্তমানে কতজন কর্মী আপনাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন?
তানবীর শহীদ: বর্তমানে নিটল নিলয় গ্রুপে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কর্মী কাজ করছে। বাংলাদেশের গাড়ির জগতে একটি সুপরিচিত নাম নিটল মটরস লিমিটেড। যারা আমাদের গ্রাহক তারা ভালো করেই জানেন যে, সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা কখনোই আপস করি না। বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের রয়েছে দেশব্যাপী প্রায় ৬৮টি সার্ভিস সেন্টার এবং ৭০০+ স্পেয়ার পার্টস আউটলেট।
প্রশ্ন:: গাড়ি ব্যবসায় বর্তমানে কি কি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন?
তানবীর শহীদ: চ্যালেঞ্জ তো সব সময় থাকবেই, চ্যালেঞ্জ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বর্তমানে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি সমস্যা। সত্যিকার অর্থে চ্যালেঞ্জ কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আমরা আশাবাদী- যুদ্ধ ও ডলার ক্রাইসিসগুলো এক সময় সব ঠিক হয়ে যাবে। সবধরনের চেঞ্জ ও চ্যালেঞ্জের সঙ্গে খাপ খাইয়ে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে হবে।
প্রশ্ন:: ডলার সংকট আর টাকার অবমূল্যায়নে গাড়ির দাম কি পরিমাণ বেড়েছে?
তানবীর শহীদ: ডলারের দাম অনুযায়ী গাড়ির দাম বাড়ানো সম্ভব হয়নি। মার্কেটে প্রতিযোগিতা রয়েছে। এছাড়া কারও কারও কাছে পুরাতন স্টক রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির সম্পূর্ণ প্রভাব কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
প্রশ্ন:: বর্তমানে গাড়ির বাজারে আপনাদের কত শতাংশ শেয়ার আছে?
তানবীর শহীদ: বর্তমানে আমাদের মার্কেট শেয়ার ৬০ শতাংশের মতো। গাড়ির বিক্রি কমলেও আমাদের মার্কেট শেয়ার আগের মতোই আছে। এর কারণ আমাদের বিক্রয়োত্তর সেবা। এক্ষেত্রে আমরা কখনোই আপস করি না এবং ভবিষ্যতেও করবো না। এ ব্যাপারে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
প্রশ্ন:: বলা হচ্ছে দাম বৃদ্ধিতে গাড়ি বিক্রি কমেছে। এতে ব্যবসা পরিচালনায় কি ধরনের সমস্যা হচ্ছে?
তানবীর শহীদ: বাংলাদেশের গাড়ির বাজারে আমরাই সবচেয়ে বড় সেটআপ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছি। যেখানে অন্তর্ভুক্ত আছে ৬৮টি সার্ভিস সেন্টার এবং ৭০০+ স্পেয়ার পার্টস আউটলেট। স্বাভাবিকভাবেই এত বড় একটি সেটআপে অনেক লোক কাজ করছে। আমরা কর্মী ছাঁটাইয়ে বিশ্বাস করি না। ফলে ব্যবসা ছোট হয়ে যাওয়ার কারণে কোম্পানির আয় কমে গেলেও, খরচ আগের মতোই রয়ে গেছে। এটি আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। হঠাৎ করে আপনি আপনার ব্যবসার ম্যানপাওয়ারে অথবা অন্য কোথাও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনলে গ্রাহকদের আশানুরূপ সেবা প্রদান করা সম্ভব হয় না। জিডিপি’র উপর নির্ভর করে সেল। জিডিপি বৃদ্ধি পেলে বিক্রয় অবশ্যই বাড়বে।
প্রশ্ন:: সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে আমাদের করণীয় কি?
তানবীর শহীদ: সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। আমাদের দেশে যে দুর্ঘটনাগুলো হয় এটি শুধুমাত্র গাড়ি বা চালকের কারণে নয়, আইন না মানার কারণেও হচ্ছে। আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে আইনগুলো জানা ও মেনে চলা জরুরি। পথচারীরা যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হচ্ছে। ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও ব্যবহার করছে না। জেব্রা ক্রসিং ছাড়া সড়কগুলোতে মানুষের পারাপার কখনোই কাম্য নয়। সড়ক নিরাপদ করতে চাইলে প্রচলিত আইনের প্রয়োগে আরও কঠোর হতে হবে। রুট ডিজাইন ঠিক করতে হবে। একই রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে
প্রশ্ন:: সড়ক নিরাপত্তা বলেন আর পরিবহন খাতের অন্যান্য বিষয় বলেন, এখানে অনেক কিছুই অর্গানাইজড না। বাংলাদেশের পরিবহন খাতে আমূল পরিবর্তন আনা কি সম্ভব?
তানবীর শহীদ: সবকিছুকে একটা সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে। একটা সিস্টেমের মধ্যে এলে সবকিছুই সুন্দর হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে আউট অফ বক্স চিন্তা করতে হবে। উন্নত বিশ্বের যে বিষয়গুলো প্রয়োগ করা সম্ভব, তা এখানে কার্যকর করা যেতে পারে। পরিবহন সেক্টরে অনেক কাজ করার আছে। এই পরিবহন সেক্টরে আমূল পরিবর্তন আনা অবশ্যই সম্ভব। যদি সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কাসহ অন্যান্য দেশ পারে তাহলে আমরা কেন পারবো না। আমরা তো অনেক দিক থেকে অনেকের চেয়ে এগিয়ে। যদি প্ল্যান থাকে, এফোর্ট দেই অথবা সিস্টেম অনুযায়ী কাজ করি বা ভালো কাউকে ফলো করি রেজাল্ট কেন আসবে না? দেশকে চেঞ্জ করার অনেক অনেক অপরচুনিটি রয়েছে। আমি খুবই আশাবাদী একজন ব্যক্তি-পরিবর্তন আসবেই।
সুত্রঃ মানবজমিন।