সিলেটে ছাত্রলীগের নামে চলছে চাঁদাবাজি। দেশ জুড়ে এখন আলোচিত বিষয়। সংসদেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন স্থানীয় এমপি ও সাবেক মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। ব্যবসায়ীরা আন্দোলনে। দিয়েছেন আল্টিমেটাম। এরপরও চিহ্নিত চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশি অভিযানে সন্তুষ্ট নয় ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়েই চাঁদাবাজরা দাপট দেখিয়েছে। এখন আবার এই কর্মকর্তারাই তাদের গ্রেপ্তার করবে? বিশেষ করে শাহপরান এলাকার চাঁদাবাজদের দিকে পুলিশের নজর এখনো পড়েনি। তবে পুলিশ কমিশনার জাকির হোসেন বলছেন- চাঁদাবাজদের কোনো ছাড় নয়।
চাঁদাবাজদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও পুলিশ এক হয়ে যাওয়ার কারণেই পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। অনেক ঘটনা পুলিশের সামনেই ঘটছে। এ কারণে পুলিশের ওপর আস্থা আনতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। কয়েক মাস আগে নগরের ধোপাদিঘীরপাড়ে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এক সবজি বিক্রেতা খুন হয়েছেন। ওই সময় ভোররাতে সুবহানীঘাটগামী সবজি বিক্রেতাদের টার্গেট করে ছিনতাই করা হতো। খুনের পর পুলিশ ভোররাতে নগরে টহল বসিয়েছিল। পরবর্তীতে সেই টহলও জোরদার করা হয়নি। সিলেট চেম্বার সভাপতি তাহমিন আহমদ জানিয়েছেন, স্মারকলিপি দেয়ার পরদিন শাহপরান থানা এলাকায় সুপারিভর্তি গাড়ি ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জৈন্তাপুর থেকে সুপারিভর্তি গাড়ি কাজিরবাজার সুপারির আড়তে নিয়ে আসার পথে গাড়িটি ছিনিয়ে নেয়া হয়। অহরহ এমন ঘটনা ঘটছে। এদিকে সড়কে চাঁদাবাজির ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় এমপি ও সাবেক মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তিনি সিলেটের এই চাঁদাবাজির বিষয়টি মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছেন। সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, ‘তার নির্বাচনী এলাকা সিলেটে কতিপয় সন্ত্রাসী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী ট্রাক থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে। চাঁদাবাজদের অত্যাচারে ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। তিনি এই চাঁদাবাজি বন্ধ এবং চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায় করা টাকা বাজেয়াপ্ত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।’ আব্দুল মোমেন বলেন, সিলেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা তার কাছে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী প্রতি রাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী যেমন শাকসবজি, চিনি ইত্যাদি পরিবহনে আসা ট্রাকগুলোর প্রতিটি থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা জোর করে নেয়। চাঁদা না দিলে ট্রাক ছিনতাই করে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর ২-১ দিনের জন্য সন্ত্রাসী তৎপরতা কিছুটা কমেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা আবার শুরু হয়। এই চাঁদাবাজদের অত্যাচারে ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি এই চাঁদাবাজি বন্ধ এবং সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজির মাধ্যমে যে টাকা সংগ্রহ করেছে, তা বাজেয়াপ্ত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এর আগে গত সপ্তাহে সিলেট চেম্বার, ব্যবসায়ী সমিতি, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা মিলে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে তারা উল্লেখ করেন- কালিঘাটে পিয়াজভর্তি ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি করা হয়। জৈন্তাপুর থেকে সবজিভর্তি ট্রাকটি সিলেট নগরে প্রবেশের পর সেটিও লুট করে নেয়া হয়। সোবহানীঘাট সবজির পাইকারি আড়তে আসা সবজিভর্তি ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি করা হয়। চাহিদামাফিক চাঁদা দেয়া না হলে সবজি লুট করে নেয়া হয়। কখনো ট্রাক নিয়ে যায় আবার কখনো নিয়ে যায় টাটকা সবজি। মাসের পর মাস ধরে এভাবে চাঁদাবাজি চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটের নিত্যপণ্যের পাইকারি আড়ত কালীঘাটে গিয়ে চাঁদাবাজরা হানা দেয়। অতীতে কখনোই এমন ঘটনা ঘটেনি। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানালেও কোনো কাজ হয়নি। এরপর সবজির ট্রাকে চাঁদাবাজি করতে ছাত্রলীগের নামে চাঁদাবাজরা রাস্তায় নামে। চাঁদাবাজরা সুবহানীঘাট সবজি মার্কেট পর্যন্ত গিয়ে অবস্থান নিতো। এ নিয়ে কয়েকদফা পুলিশে অভিযোগ করলেও কোনো কাজ হয়নি বলে জানিয়েছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তবে; বিষয়টি আলোচিত হওয়ার পর ঘুম ভেঙেছে পুলিশের। সোবহানীঘাট সবজির আড়তে পিকআপ চালকের ওপর হামলার ঘটনায় বুধবার রাতে রিকাবীবাজার থেকে শান্ত নামের এক চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোবহানীঘাট সবজির আড়তের সামনের সড়কে চালক সাব্বির আহমদ যখন সবজিভর্তি পিকআপ নিয়ে এসে পৌঁছেন, ঠিক সে সময় কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে আসা ১০/১২ জনের সশস্ত্র দল পিকআপের গতিরোধ করে দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চালক সাব্বির আহমদ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সন্ত্রাসীরা পিকআপ থেকে টেনেহিঁচড়ে সাব্বিরকে মাটিতে নামিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে। এ সময় সাব্বিরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা সাব্বিরের সঙ্গে থাকা নগদ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে দ্রুত চলে যায়। এ ঘটনার পর থেকে সোবহানীঘাট সবজির আড়তের ব্যবসায়ী ও সবজি পরিবহনে নিয়োজিত যানবাহন চালকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় পরদিন সাব্বির আহমদ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। তবে; মামলা হলেও আসামিরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।